গণিতের জটিল হিসাবের আবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেখানে কোন প্রার্থী মোট কতো ভোট পেলেন তা দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। নির্বাচিত হন ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট নামক এক ভোটের মাধ্যমে। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্য মিলে মোট ইলেক্টোরাল ভোট আছে ৫৩৮টি। এর মধ্যে কোনো প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে হয়। সব রাজ্যে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা এক না। জনসংখ্যার ভিত্তিতে এই ভোট বরাদ্দ। সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবার যুক্তরাষ্ট্রে। ৫ই নভেম্বর নির্ধারিত হবে ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস নাকি রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতে উঠবে হোয়াইট হাউসের চাবি।
আজকের দিন নিয়ে আর বাকি আছে চারদিন। এরপরই নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচন। এই নির্বাচনে কিছু রাজ্য আছে, যেখানে কোনো একটি দলের সুনির্দিষ্ট ঘাঁটি। ফলে সেসব হিসাব আমলে না নিয়ে মাথায় ঢুকেছে ব্যাটলগ্রাউন্ড বা সুইং স্টেট বলে পরিচিত সাতটি রাজ্য। এই রাজ্যগুলো যেকোনো সময় যেকোনো প্রার্থীর দিকে ঘুরে যেতে পারে। কারণ, তারা সুনির্দিষ্ট কোনো দলের প্রতি অনুগত নয়। ভেবেচিন্তে যাকে পছন্দ হয়, তাকেই ভোট দেন ভোটাররা। মোট সাতটি সুইং স্টেটে ইলেক্টোরাল ভোট আছে ৯৩টি। এর মধ্যে পেনসিলভ্যানিয়ায়-১৯টি, জর্জিয়ায়-১৬টি, নর্থ ক্যারোলাইনায়- ১৬টি, মিশিগানে-১৫টি, অ্যারিজোনায়-১১টি, উইসকনসিনে-১০টি এবং নেভাদায় আছে ৬টি ভোট।এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসি সহ ১৯টি রাজ্য থেকে কমালা হ্যারিস কমপক্ষে ২২৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন বলে প্রক্ষেপণে বলা হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে পারেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ৫৪টি, নিউ ইয়র্ক থেকে ২৮টি এবং ইলিনয় থেকে ১৯টি। ফলে তাকে ২৭০ স্কোর করতে হলে আরও প্রয়োজন হবে ব্যাটলগ্রাউণ্ডের মোট ৯৩টি ভোট থেকে কমপক্ষে ৪৪টি। এক্ষেত্রে তিনি যদি পেনসিলভ্যানিয়াতে ১৯টি, জর্জিয়াতে ১৬টি এবং নর্থ ক্যারোলাইনার ১৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে তার ঘাটতি থাকা ৫১টি ভোট পূরণ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তিনি ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। কিন্তু ফাইভ থার্টি এইটের মতে, এই তিনটি রাজ্যেই তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। গড় জরিপ অনুযায়ী তাদের ব্যবধান পেনসিলভ্যানিয়াতে খুবই কম। জর্জিয়া এবং নর্থ ক্যারোলাইনাতে এই ব্যবধান আর একটু বেশি। গাণিতিক হিসাবে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করতে ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিসের সামনে সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি পথ আছে।
তার মধ্যে ওই তিনটি ব্যাটলগ্রাউন্ড যদি তিনি জিততে পারেন তাহলে কেল্লাফতে। অথবা অন্য চারটি রাজ্যে যদি জয় নিশ্চিত করতে পারেন। ব্যাটলগ্রাউন্ডের ৫ বা তারও বেশি রাজ্য যদি কোনো প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে বিজয় তার সুনিশ্চিত। অন্যদিকে ২৪টি রাজ্যে রিপাবলিকানদের ঘাঁটি আছে। সেখান থেকে ট্রাম্প কমপক্ষে ২১৯ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেতে পারেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে টেক্সাসে ৪০টি, ফ্লোরিডায় ৩০টি এবং ওহাইওতে ১৭টি ভোট। ২৭০ নিশানায় পৌঁছতে হলে ব্যাটলগ্রাউন্ডের ৯৩টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট থেকে ট্রাম্পের প্রয়োজন হবে কমপক্ষে ৫১ ভোট। ডেমোক্রেটদের মতোই তিনি যদি পেনসিলভ্যানিয়া (ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ৯), জর্জিয়া (১৬) ও নর্থ ক্যারোলাইনার (১৬) ইলেক্টোরাল ভোট জয় করতে পারেন তাহলে তার জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পথ নিশ্চিত হতে পারে।
জনমত জরিপ বলছে, এই তিনটি রাজ্যেই তিনি এগিয়ে আছেন। যদি রিপাবলিকানরা এই তিনটি রাজ্যের সবটাতে জিততে না পারে তাহলে ৭ ব্যাটলগ্রাউন্ডের মধ্যে কমপক্ষে চারটি রাজ্যে জয় নিশ্চিত করতে হবে। যদি দুই দলের প্রার্থীর কেউই ২৭০ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হন, অর্থাৎ দু’জনেই যদি ২৬৯ পর্যন্ত এসে থেমে যান তাহলে কী হবে? এক্ষেত্রে যেসব হিসাব সামনে আসতে পারে। তা হলো এখন ধারণা করা হচ্ছে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হ্যারিস ২২৬ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট জিতবেন। যদি তাই হয় তাহলে কীভাবে দুই প্রার্থী ২৬৯ ভোট পেতে পাবেন সে হিসাবটা দেখে নেয়া যাক। কমালা ২২৬ ইলেক্টোরাল ভোট পাওয়ার পর তাকে জর্জিয়া (১৬), অ্যারিজোনা (১১), উইসকনসিন (১০) এবং নেভাদায় (৬) জয় পেতে হবে। তাহলেই ২২৬ + ৪৩ = ২৬৯ ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে রিপাবলিকান ট্রাম্প যদি তার নিশ্চিত ২১৯ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পান তাহলে তাকে জিততে হবে পেনসিলভ্যানিয়া (১৯), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬) ও মিশিগানে (১৫)। ২১৯ এর সঙ্গে এই ৫০ যোগ হয়ে হবে ২৬৯।
অন্যভাবেও দুই প্রার্থী ২৬৯ ভোট পেতে পারেন। তার মধ্যে ডেমোক্রেট ২২৬ এর সঙ্গে জিততে হবে জর্জিয়া (১৬), নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬) ও অ্যারিজোনা (১১)। তাহলেই কমালার ২৬৯ হয়ে যায়। অন্যদিকে ট্রাম্পের ২১৯ এর সঙ্গে জিততে হবে পেনসিলভ্যানিয়া (১৯), মিশিগান (১৫), উইসকনসিন (১০) ও নেভাদা (৬)। এই হিসাব অন্যভাবেও হতে পারে- কমালাকে ২২৬ এর সঙ্গে জিততে হবে নর্থ ক্যারোলাইনা (১৬), অ্যারিজোনা (১১), উইসকনসিন (১০) এবং নেভাদা। অন্যদিকে ট্রাম্পকে ২১৯ এর সঙ্গে যোগ করতে হবে পেনসিলভ্যানিয়া (১৯), জর্জিয়া (১৬) এবং মিশিগান (১৫)। যদি এমন ঘটনার অবতারণা হয় তখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের ওপর নির্ভর করবে না। তখন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন কে হবেন প্রেসিডেন্ট। এক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিটি রাজ্যের প্রতিনিধি মিলে মাত্র একটি ভোট দিতে পারবেন। এভাবে ৫০টি রাজ্যের প্রতিনিধিরা ৫০টি ভোট দেবেন। তাতে যে প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাবেন অর্থাৎ ৫০-এর মধ্যে কমপক্ষে ২৬ ভোট পাবেন তাকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। তারপর ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাই করবে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট। এতে যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন তিনি হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।