খবর প্রকাশিত: ০৬ মে, ২০২৫, ০৫:১৮ এএম
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে পাঁচ সিটিতে নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। তাই এবার যারা সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত, পরিশ্রমী, এলাকায় জনপ্রিয়, তৃণমূলের কর্মী থেকে উঠে আসা নেতা এবং যাদের কোনো নৈতিক স্খলন নেই এমন প্রার্থীদেরই বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। তাই পাঁচ সিটির দুটিতে পুরনো মুখে ভরসা রেখেছে আওয়ামী লীগ; নতুন মুখ বাছাই করেছে তিন সিটিতে। বাদ পড়েছেন গাজীপুরের বহুল আলোচিত জাহাঙ্গীর আলম ও বরিশালের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। দলীয় সূত্র বলছে, টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকায় অনেক নেতার গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। তাদের কাছে রাজনীতির চেয়ে ক্ষমতার সাধ নেওয়াটাই বেশি জরুরি। এতে স্থানীয় নেতৃত্বে দেখা দিয়েছে চরম দ্বন্দ্ব। তাই পাঁচ সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়েচড়ে বসছে আওয়ামী লীগ। দক্ষ ও পরীক্ষিত প্রার্থীর পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রার্থী বেছে নিয়েছে দলটি। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে যাতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেন এবং দলকে যেন কোনো বেগ পেতে না হয়।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ হবে। খুলনা ও বরিশালে ভোট হবে আগামী ১২ জুন। আর ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে ভোটগ্রহণ হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি ২০১৩ সালে বিএনপির প্রার্থী এম এ মান্নানের কাছে হেরে যান। পরেরবার জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেই নির্বাচনে পাঁচ সিটির ৪টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হলেও সিলেটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় পান বিএনপির আরিফুল হক। তিনি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার মেয়র হন। বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যু হওয়ায় এবার সিলেটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। আর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ওপরই ভরসা রেখেছে দল। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক একাধিকবার মেয়র হয়েছেন। সেখানেও মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। কারণ, সেখানে অন্য কোনো নেতার তেমন কোনো জোরালো তৎপরতা ছিল না। আর বর্তমান মেয়রদের মধ্যে মাঠের জরিপে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা বরিশালের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন পাননি। সেখানে দলীয় কোন্দলও প্রকট। বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের সঙ্গে মেয়রের দ্বন্দ্ব বরিশালের সর্বস্তরে আলোচিত। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেনের (হিরণ) অনুসারীদের কেউ কেউ ভেতরে ভেতরে সাদিক আবদুল্লাহর বিপক্ষে। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর আপন চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মেয়র পদে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ, যদিও তার দলীয় পদ নেই। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, আগামী বছরের প্রথম ভাগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এতে বাকি রয়েছে আর মাত্র ৮ মাস। ফলে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।
যারা তৃণমূল নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেন, নৌকা হলেই পাস করে যাবেন এমন মনোভাব পোষণ করেন, দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না, এলাকায়ও কোনো যোগাযোগ রাখেন না তাদের সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন, নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন তাদের বিষয়েও এবার কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে দলীয় হাইকমান্ড। এদিকে, গাজীপুর আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, যেদিন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছে সেদিন থেকেই স্থানীয় রাজানীতির মাঠে জাহাঙ্গীরের নাম শোনা গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা ধরে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম আবারও স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে এই সিটিতে নির্বাচন করবেন। ঘটেছেও তাই, ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এবারও বিভক্ত হতে পারেন; যেমনটি ঘটেছিল ২০১৩ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। সেবারও আজমত উল্লা খানকে প্রার্থী করেছিল আওয়ামী লীগ। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। দলের চাপে একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর আলম ভোটের মাঠে নীরব ভূমিকা নিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটা অংশ নিষ্ক্রিয় ছিল এবং আজমত উল্লা খান বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এবারও পরিস্থিতি সেদিকে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। তবে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম যাতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন অথবা ’১৩ সালের মতো নীরব ভূমিকায় থাকেন দল থেকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। গাজীপুর নগরীরির আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ‘দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তার পক্ষে কাজ করব। কিন্তু সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরও দলের শীর্ষ পদে ছিল এবং তারও একটা সমার্থক গোষ্ঠি রয়েছে। এখন দেখার বিষয় কেন্দ্র থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সৎ, যোগ্য ও দলের জন্য যারা নিবেদিত তাদেরকেই মনোনয়ন দিয়েছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যোগ্যতা বিবেচনা করেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নেই, এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে, সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত, পরিশ্রমী ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী- এমন ব্যক্তিদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নির্বাচনের অনেক সময় রয়েছে এখন মাঠে অনেক কিছুই হবে। এখনই সব বলা যাবে না।’