NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, মে ৪, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

এখন আমি একা--মিনহাজ আহমেদ


খবর   প্রকাশিত:  ০৪ মে, ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

এখন আমি একা--মিনহাজ আহমেদ

আমার ভোরে উঠার অভ্যাস। কাক ডাকার, সূর্য উঠারও অনেক আগে উঠতাম। কখনও একা, কখনও পড়শি নারায়ন সরকার, কখনও আমার হুজুগে তৈরি মৌলভীবাজার শহরের শরীরচর্চা ক্লাবের সাথীদের সাথে শহর দাপড়ে বেড়াতাম।

সেটা অন্তত ৪-৫ দশক আগের কথা। দীর্ঘদিন গত হলেও ভোরে উঠার অভ্যাসটা রয়ে গেছে। ভোরে উঠে, অফিসে যাওয়ার আগে, ধীরে-সুস্থে গোসল-টোসল সেরে নাস্তা বানাই দুজনের জন্যে। আমি নাস্তা সেরে অফিসে চলে যাই, সে খেয়েদেয়ে সিনেমা দেখতে বসে যায়। তার সিনেমা মানে জানালা দিয়ে গাড়ির যাওয়া আসা দেখা। তারপর জানালার পাশের টেবিলেই ঘুম।

আজ তিনদিন হলো আমি একা। সে নেই, মিটবল নেই। একমাস দূরারোগ্য অসুখে কষ্ট পাওয়ার পর তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ঘুম পাড়ানর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমাদের জন্য কঠিন ছিলো। ছেলে বললো- খরচের কথা ভেবোনা, ওকে ঘুম পাড়াতে গেলেও অনেক খরচ, চিকিৎসার জন্যও অনেক। কিন্তু কোনো চিন্তা করবেনা। ওর জন্য আলাদা করে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ জমিয়ে রেখেছি।

আমাদের ছেলেমেয়েরা বাবামাকে যেমন, বিড়ালদেরও তেমন ভালবাসে। মায়ের কষ্ট হয় ভেবে ছেলে বিড়ালের জন্য একটা স্বয়ংক্রিয় বিদ্যুৎ চালিত টয়লেট কিনে দিয়েছে যেটা নিজে থেকে পরিস্কার হয়। তেমন আরও কতো কি যে কিনে দিয়েছে!

না, আমরা অর্থের কথা ভাবিনি, ভেবেছি মিটবলের কষ্টের কথা। অবুঝ প্রাণী, কষ্টের কথা নিজে বলতে পারেনা। নিরবে চোখ বুঁজে সয়ে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। জোর করে ধরে সিরিঞ্জ্ করে টিউব দিয়ে বিশেষ ধরনের খাবার, ওষুধ, পানি খাওয়াই। গলায় কলার বা চোঙ সাগানো, দেহের কোথাও চাইলে সে চুলকাতে পারেনা। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সারাক্ষণ, অথবা একটানা ঘুমে ঢলে পড়ে থাকে।

শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের পরামর্শ এবং ছেলেমেয়েসহ পরিবারের সবার সম্মতিতে অসহায় মিটবলকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। সে তখন আমার কোলে শুয়ে। এতো দুর্বল সে, যেনো মিশে আছে আমারই দেহের সাথে। ডাক্তারের দুটো ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর সে আস্তে করে ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর ডাক্তার স্টেথোস্কোপ লাগিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করলেন, বল্লেন- সে চলে গেছে।

এখনও ভোরে উঠি। অফিসে যাওয়ার আগে নাস্তা বানিয়ে খাই। একটু সময় বাঁচে কী? মোটেও না। বাড়তি সময়টা বসে বসে কাটাই, মিটবলের কথা ভেবে। নাস্তা করি। একা।