NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, মঙ্গলবার, জুন ৩, ২০২৫ | ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২ এর গভর্নর পদে প্রথম বাংলাদেশি আসেফ বারী টুটুলের ঐতিহাসিক বিজয় ও সংবর্ধনা অবৈধভাবে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ চারদিনব্যাপী নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক ৩৪তম বাংলা বইমেলা সমাপ্ত বাংলাদেশি প্রবাসীদের আনন্দঘন পরিবেশে কুইন্সে পালিত হলো ইউ এস এ ৯৭-৯৯ এর পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে সামরিক স্থাপনা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে চীন, জানাল যুক্তরাষ্ট্র 'To achieve great things, we must dream big and take action to pursue them' চারদিনব্যাপী নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা ৩৪তম বইমেলা শুরু ৩৪তম নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা শুরু ২৩শে মে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন ফিলিস টেইলর, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম, বীর প্রতীক  এবং সাদাত হোসাইন ৮ মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে: মির্জা আব্বাস
Logo
logo

বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী জাপানি নাগরিক শিউলি নাকাজিমা আমাদের বাড়ি এসেছিলেন


খবর   প্রকাশিত:  ০২ জুন, ২০২৫, ০২:২৪ এএম

বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী জাপানি নাগরিক শিউলি নাকাজিমা আমাদের বাড়ি এসেছিলেন

 

 হাসান মীর

বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী জাপানি নাগরিক শিউলি নাকাজিমা ( Shiuly Nakajima ) আমার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গতকাল বিকেলে, দোসরা মার্চ, ২০২৪ রাজশাহীতে আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাগনে তানিম, তাঁর সঙ্গে এর আগে আমার সাক্ষাৎ বা পরিচয় হয়নি। শিউলি- সানের ( জাপানিরা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে সান সম্বোধন করে থাকে ) সঙ্গে আমার পরিচয় টোকিওতে প্রায় ৩৬ বছর আগে ১৯৮৮ সালের শুরুতে, আমি যখন ডেপুটেশনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বেতারের বার্তা বিভাগ থেকে রেডিও জাপান- NHK'র বাংলা সম্প্রচার বিভাগে কাজ করতে গিয়েছিলাম। টোকিও মহানগরীর শিব্যুয়া রেলস্টেশনের কাছে মেট্রো প্লাজা নামের একটি বিল্ডিংয়ের দোতলায় তখন শিউলি-সানদের রয়েল বেঙ্গল নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। রেস্টুরেন্টের নাম বেঙ্গল এবং শেফ-কুক-ওয়েটার প্রায় সবাই বাংলাদেশী হলেও এটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট নামেই পরিচিত ছিল। তবে সেখানে অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়ের পাশাপাশি হালাল মাংস পাওয়া যেতো । এনএইচকে ভবন থেকে স্থানটি কাছে হওয়ায় আমি কোনদিন দুপুরে আবার কোনদিন অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে রয়েল বেঙ্গলে হাজির হতাম। সেখানে অনেক বাংলাভাষীর সঙ্গে দেখা হতো, বাঙ্গালি ওয়েটাররাও ছিলেন সদালাপী। আমি জাপানি ভাষা কিছুই জানতাম না ফলে তাদের কাছে জাপান ও জপানিদের সম্পর্কে টুকিটাকি তথ্য সংগ্রহ করা ছিল আমার বাড়তি লাভ। শিউলি সানের সাথেও এভাবেই পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতা। আমাদের সম্পর্ক ছিল ভাই-বোনের মতো । রেস্টুরেন্টটি অনেক আগেই উঠে গেছে । তিনি এখন টোকিওর বাইরে কোতো নামের শহরে থাকেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, শিউলি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ১৯৭৫ সালে টোকিও যান, পরবর্তীতে বৈবাহিক সূত্রে জাপানের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।

তবে শিউলি এখন জাপানের বাসিন্দা হলেও বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। জাপানি ও জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সহায়তায় তাঁরা ঢাকার কাছে গাজীপুরে অনাথ ও পিতা-মাতা পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য একটি এতিমখানা পরিচালনা করছেন আর এই উপলক্ষে বছরে দুই-তিনবার তাকে বাংলাদেশে আসতে হয়। এবারেও সেভাবে আসা। এবার ঢাকায় এসে মাস খানেক আগে ফেসবুক মেসেঞ্জারে জানালেন তিনি আমার সাথে দেখা করতে একদিনের জন্য হলেও রাজশাহী আসতে চান। জবাবে আমি তাঁকে জানালাম আমি খুবই অসুস্থ, প্রায় সারাক্ষণই শুয়ে থাকতে হয়, চেহারা হয়েছে গিরগিটির মতো। এ অবস্থায় আমার সাথে দেখা না৷ হওয়াই ভালো । তিনি বললেন - ঠিক আছে, তাই হবে। এর সপ্তাহ খানেক পর তিনি জানালেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২০২২ সালের ৮ই জুলাই আততায়ীর হাতে নিহত জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্মরণে শতাধিক পৃষ্ঠার একটি স্মারক গ্রন্থ বা স্মরণিকা প্রকাশ করেছেন, কাজী ইনসানুল হক সম্পাদিত সেই স্মরণিকার কয়েকটি কপি ঘনিষ্ঠজনদের দেওয়ার জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছে। তিনি তারই একটি ক্যুরিয়ার যোগে আমার কাছে পৌঁছে দিতে চান আর সেইজন্য আমার বাড়ির ঠিকানা চাইলেন। আমি তাঁকে বাড়ির ঠিকানা দিলাম। শিউলি সেই স্মরনিকার কপিটির সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্যাকেটে মিষ্টি ও চকোলেট এবং আসার পথে নাটোরের বনপাড়া থেকে কেনা দুই ব্যাগভর্তি পেয়ারা,কমলা ইত্যাদি হাতে নিয়ে তাঁর ভাগনেসহ গতকাল বিকেলে আমাদের বাড়ির দরজায় উপস্থিত হলেন। আমি তাঁকে আগাম খবর না-দিয়ে আসার জন্য মৃদু বকুনি দিলে তিনি সহাস্যে বললেন -- এই বুদ্ধি না খাটালে তো আপনার বাড়িতে আসা হতো না, দেখাও হতো না। এরপর পরিচয় বিনিময়ের পালা --। মনে হলো অনেক বছর পর আমার সঙ্গে দেখা এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হয়ে শিউলি-সান যেমন খুশি হয়েছেন, একইভাবে তাঁর অমায়িক ও আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহারে আমার স্ত্রী, কন্যা এবং নাতনিরাও আনন্দ অনুভব করেছেন । নাতনিদের একজন ইউটিউব দেখে কিছুটা জাপানি ভাষা রপ্ত করেছে দেখে শিউলি এবার জাপান গিয়ে তার জন্যে ভাষা শিক্ষার কিছু বই পাঠাবেন বলে কথা দিলেন। এক ফাঁকে আমার কন্যা জাপান থেকে আনা অ্যালবামে শিউলি-সান ও তাদের রেস্তোরাঁয় তোলা অনেকগুলি ছবি এনে দেখালে তিনি খুশি হলেন এবং ছবির মানুষদের নিয়ে স্মৃতিচারণের সুযোগ হলো । এরপর আলাপের ফাঁকে চা ও টা পরিবেশন। 'টা"এর যে দুটি আইটেম শিউলি এবং তার ভাগনের বেশি পছন্দ হলো তা ছিল ঘরে বানানো মাংসের টিকিয়া আর বাটার মোড়ের বিহারিদের দোকান বলে পরিচিত রেস্তোরাঁর সুস্বাদু জিলিপি। আমার স্ত্রীর ছাদবাগান দেখেও শিউলির উচ্ছ্বাসের শেষ নাই, তাদের এতিনখানার বাগানে রোপনের জন্য আমার স্ত্রী তাঁকে টবে করে কয়েকটি অ্যাডেনিয়ামের চারা দিলেন।

এরমধ্যে সন্ধ্যা নেমেছে, এবার বিদায় নেয়ার পালা। শিউলি -সান জানালেন রাতে তারা সার্কিট হাউসে অবস্থান করবেন এবং আগামীকাল অর্থাৎ আজ সরদহে একটি এনজিওর কার্যক্রম দেখতে যাবেন। এভাবেই শিউলি-সানের সাথে তিন যুগ পর এবং সম্ভবত জীবনে শেষবারের মতো সাক্ষাতের পর্ব শেষ হলো। ভাগনে তানিম ঘরে বসে তাঁর মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় অনেকগুলি ছবি তুলেছিলেন, তারই একটা ( শিউলির সঙ্গে আমি, দু'জনেরই বয়স বেড়েছে ) ) নিচে দেওয়া হলো।

পাদটীকা : রাতে ফোনে কথা বলার সময় শিউলি রাজশাহী শহরের অসম্ভব সুন্দর আলোকসজ্জা, প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন রাস্তা ও ফুটপাত এবং পদ্মাতীরে গড়ে ওঠা দোকান পাটের পাশাপাশি নগরীর মেয়র লিটন সাহেবেরও প্রশংসা করলেন।