NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, মঙ্গলবার, মে ৬, ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

নতুন বছরের শুরুতেই মৃত্যুর তালিকায় প্রথম সংযোজিত হলো বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান


খবর   প্রকাশিত:  ০৩ মে, ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম

নতুন বছরের শুরুতেই মৃত্যুর তালিকায় প্রথম সংযোজিত হলো বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান

সাইফুর রহমান ওসমানী জিতু , লস এন্জেলেস

ইংরেজী ২০২৫ সালের নতুন বছরের শুরুতেই মৃত্যুর তালিকায় প্রথম সংযোজিত হলো বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান (  ২৭ জুন ১৯৬৫ - ৪ জানুয়ারি ২০২৫)। বাংলাদেশের বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের বহুল  আলোচিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের  জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান গেলো ৩রা জানুয়ারী, শুক্রবার রাত ১টা ১০মিনিটে  ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত‍্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো মাত্র ৬০ বছর। তিনি ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রেখে গেছেন।  পারিবারিক সম্পর্কের সুবাদে অন্জনা রহমান আমার ভাবী হন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ২০২২ সালে প্রয়াত বাংলাদেশের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিবেশক সমিতির সভাপতি ও চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে, যিনি সম্পর্কে আমার আপন চাচাতো ভাই। তাঁর অপর ছোট ভাই মাহমুদ কলি, তিনি নিজেও বাংলাদেশের জনপ্রিয় নায়ক হিসাবে বেশ সূপরিচিত। অন্জনা চিত্র পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে বিয়ে করার সময় ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন । ইতিপূর্বে তিনি ১৯৮৭ ও ১৯৯৮ সালে লস এন্জেলেস শহরে এসেছিলেন।  অন্জনা রহমানের অপ্রত্যাশিত এ মৃত্যুর দূ:সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে বিদ‍্যুতের মতো বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলা চলচ্চিত্র ভক্তদের কাছে। হতবাক আর ভাববিহ্বল হয়ে পড়ে সকলেই এই খবরে। আমেরিকায় অন‍্যান‍্য  বাংলাদেশী অধ‍্যুষিত শগরগূলোর মত লস এন্জেলেস শহরেও  ব‍্যাক্তিগতভাবে অনেক পরিচিত মুখ তাঁর মৃত‍্যুতে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন ।  অন্জনা রহমান চলচ্চিত্রে অভিনয় করার আগে তিনি একজন অত‍্যন্ত জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী হিসেবে বিশেষ সুপরিচিত ছিলেন। এশিয়া মহাদেশীয় নৃত্য প্রতিযোগিতা তিনি প্রথম স্থান ও জাতীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় তিনি তিনবার  সেরা নৃত্যশিল্পী হিসাবে প্রথম স্থান অর্জন করেন । এছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য পুরস্কার সহ, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করা একমাত্র দেশীয় চিত্রনায়িকা ছিলেন অন্জনা । ১৯৮১ সালে তিনি ‘গাংচিল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এবং ১৯৮৬ সালে ‘পরিনীতা’ ছায়াছবিতে অভিনয়ের জন্য ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’ হিসেবে তিনি মোট দুইবার ‘বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ লাভ করেন। এছাডাও মোট তিনবার তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার লাভ করেন। বাচসাস পুরস্কার ‘শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী’ হিসাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে: মোহনা, পরিনীত‍া ও রাম রহিম জন। অঞ্জনার অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত সেতু চলচ্চিত্র দিয়ে, কিন্তু তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম নায়িকা হিসাবে চলচ্চিত্র ছিলো শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সোহেল রানা অভিনীত দস‍্যু বনহূর ছায়াছবিতে। নায়করাজ রাজ্জাকের বিপরীতে তিনি ৩০টি ওপর  চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। রাজ্জাকের বিপরীতে তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলো হল, অশিক্ষিত, আশার প্রদিপ, আশার আলো, আনারকলি সুখেথাকো, সানাই, বৌরানী, বৌ কথা কও, অভিযান, বিধাতা, রাম রহিম জনসহ বেশ কিছু ছায়াছবি। । ১৯৮৯ সালে ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীর সাথে ‘অর্জূন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপক প্রশংসিত হন। তিনি বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, নেপাল, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা সহ বহু দেশে ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন। বিদেশী জনপ্রিয় অভিনেতাদের মধ‍্যে তিনি ফয়সাল (পাকিস্তান), নাদীম (পাকিস্তান), জাভেদ শেখ (পাকিস্তান), ইসমাইল শাহ (পাকিস্তান), শীবশ্রেষ্ঠ (নেপাল) ও ভুবন কেসি (নেপাল)’সহ অনেক অভিনেতাদের সাথে ।

অঞ্জনা অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু ছায়াছবির মধ্যে রয়েছে: খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘মাটির মায়া’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘চোখের মণি’, আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’ ও সুখের সংসার’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’ ও ‘আনারকলি’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘বিচারপতি’, শফি বিক্রমপুরীর ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, নায়করাজ রাজ্জাকের ‘অভিযান’, আলমগীর কুমকুমের ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, এফ আই মানিকের ‘বিস্ফোরণ’, আজিজুর রহমানের ‘ফুলেশ্বরী’, সত্য সাহার ‘রাম রহিম জন’, মতিউর রহমান বাদলের ‘নাগিনা’, আলমগীর কবিরের ‘পরীণিতা’সহ বেশকিছু ছায়াছবি।  অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । জানা গেছে অঞ্জনাকে আজ ৪ জানুয়ারি শনিবার বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। জীবদ্দশায় তিনি তাঁর মেধা আর অভিনয় দিয়ে আমাদেস চলচিত্র শিল্পকে করেছেন সমৃদ্ধ। দোয়া করি আল্লহ যেনো ওঁনাকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেন।আমিন।