NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, মে ৪, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

চীনের উপর ৩৪% ‘সমতুল্য শুল্ক’ আরোপ একতরফা দুর্বৃত্তায়নের চূড়ান্ত উদাহরণ


আন্তর্জাতিক : প্রকাশিত:  ০৩ মে, ২০২৫, ০৭:৫৬ পিএম

চীনের উপর ৩৪% ‘সমতুল্য শুল্ক’ আরোপ একতরফা দুর্বৃত্তায়নের চূড়ান্ত উদাহরণ

 

 


যুক্তরাষ্ট্র সরকার সকল বাণিজ্যিক অংশীদারের উপর ‘সমতুল্য শুল্ক’ আরোপের ঘোষণা দিলে, চীন তাৎক্ষণিকভাবে নিজস্ব বৈধ অধিকার রক্ষায় পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। মাত্র একদিন পর, একগুচ্ছ পাল্টা পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলো- যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত সকল পণ্যে ৩৪% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং একাধিক মার্কিন সত্তাকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি। খবর প্রকাশের সাথে সাথে আমেরিকার স্টক মার্কেট ফিউচার্স ধসে পড়ে - ডাও জোনস ফিউচার্স, ন্যাসড্যাক ১০০ ফিউচার্স এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্স সবই ৩% এর বেশি নেমে যায়। বাজার বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, যদি আমেরিকা সরকার তাদের শুল্ক নীতি পরিবর্তন না করে, তবে আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর হয়ে পড়বে।


বাণিজ্য যুদ্ধ ও শুল্ক যুদ্ধ সম্পর্কে চীনের অবস্থান সর্বদাই স্পষ্ট: আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে ভয়ও পাই না। প্রয়োজনে লড়াই করতে বাধ্য হব। আমেরিকা দাবি করছে যে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই ‘সমতার’ অজুহাতে চীনের উপর ৩৪% ‘সমতুল্য শুল্ক’ আরোপ করেছে, যা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার  সর্বাধিক সুবিধাদান নীতির লঙ্ঘন এবং চীনের বৈধ উন্নয়ন অধিকারের পরিপন্থী। এটি একতরফা দুর্বৃত্তায়নের চূড়ান্ত উদাহরণ।


অর্থনৈতিক নীতিই হোক বা বাস্তব তথ্য-উপাত্ত - কোনো দিক থেকেই আমেরিকার ‘বাণিজ্যে ক্ষতি’ তত্ত্ব টিকে না। আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক ফলাফল, যা শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা, অর্থনৈতিক কাঠামো, আন্তর্জাতিক শ্রম বিভাজন, বাণিজ্য নীতি এবং ডলারের আন্তর্জাতিক অবস্থানসহ নানা বিষয় দ্বারা প্রভাবিত। তাছাড়া, আমেরিকা পরিষেবা খাতে তাদের অপ্রতিরোধ্য সুবিধাকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-আইওয়েলা সম্প্রতি একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালে আমেরিকার সেবা খাতের রপ্তানি ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা বৈশ্বিক সেবা বাণিজ্যের ১৩%। ২০২৪ সালে আমেরিকার সেবা খাতের উদ্বৃত্ত প্রায় ৩ হাজার বিলিয়ন ডলার। এ থেকে স্পষ্ট, আমেরিকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং বিপুল লাভ করছে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে, আমেরিকার শুল্ক বৃদ্ধি কখনোই বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা সমাধান করতে পারে না, বরং নিজেদের অর্থনীতিকেই আরও সংকটে ফেলে।

 

আমেরিকার বাণিজ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১.২১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০১৭ সালে আমেরিকার বৈশ্বিক শুল্ক যুদ্ধ শুরুর আগের তুলনায় ৫০% বেশি। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, চীন-আমেরিকা বাণিজ্যে চীনের উদ্বৃত্ত ৩ হাজার ২৩৩.৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩ হাজর ৬১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, শুল্ক বাধা আমেরিকার উদ্বেগের সমাধান করতে পারে না। পারস্পরিক সুবিধাজনক সহযোগিতাই সকল দেশের জনগণের কাম্য।


মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আমেরিকা সরকারের আরেকটি লক্ষ্য, কিন্তু শুল্কের চাপ এই লক্ষ্যের সাথে সাংঘর্ষিক। তথ্য অনুযায়ী: মার্চ মাসে আমেরিকার ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) গত বছরের তুলনায় ৩.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর থেকে সর্বোচ্চ। ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষণা অনুসারে, ‘সমতুল্য শুল্ক’ কার্যকর হলে যদি অন্যান্য দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, তবে আমেরিকার ব্যক্তিগত ভোগ ব্যয়ের মূল্যস্তরের স্বল্পমেয়াদী বৃদ্ধি ২.১% এ গিয়ে দাঁড়াতে পারে।


আমেরিকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও পরিস্থিতি কঠিন। ওয়ার্ল্ড ট্রেড কনসাল্টিং কোম্পানির তথ্য মতে, নতুন শুল্ক আমেরিকান কোম্পানিগুলোর উপর ৪৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বোঝা চাপাবে। মুডি'জ প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জ্যান্ডি সতর্ক করেছেন, এ বছর আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে ৪০% হয়েছে, যখন বছর শুরুতে এই সম্ভাবনা ছিল মাত্র ১৫%।


আজকের বিশ্ব বহুমুখী, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন গভীরভাবে বিকশিত হচ্ছে। প্রতিবেশীদের ক্ষতি করে একতরফা সংরক্ষণবাদী নীতি কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমেরিকার উচিত অবিলম্বে তাদের ভুল পথ থেকে সরে এসে শুল্ককে অন্য দেশের উপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা। বিশ্বের সকল দেশের উচিত একত্রিত হয়ে আমেরিকার একতরফা দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করা। শুল্ক যুদ্ধ ও বাণিজ্য যুদ্ধে কেউই জয়ী হয় না - এটি চিরসত্য।

সূত্র: স্বর্ণা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।