NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, মে ৪, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

বিশ্লেষকেরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ তথ্য কাজে লাগিয়ে স্টক লেনদেন করেন


অনুবাদ: রুবি, বেইজিং প্রকাশিত:  ০৪ মে, ২০২৫, ১০:৩৫ এএম

বিশ্লেষকেরা মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ তথ্য কাজে লাগিয়ে স্টক লেনদেন করেন


 

 

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলের স্টকগড বা শেয়ার-প্রভুদের কথা উল্লেখ করলে অনেকের মনে পড়ে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসির পরিবারের কথা। আসলে ওয়াশিংটনে শেয়ার-প্রভু কেবল পেলোসির পরিবারই নয়। তারা কেবল ক্যাপিটল হিলেই থাকে- তাও নয়। ২৭ অক্টোবর চায়না মিডিয়া গ্রুপের এক সম্পাদকীয়তে এ মন্তব্য করা হয়েছে।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ হাজার জন সরকারী কর্মকর্তার আর্থিক অবস্থা সংক্রান্ত ফর্ম থেকে জানা গেছে, ৫ ভাগের এক ভাগ কর্মকর্তা স্টক-হোল্ডার এবং স্টক লেনদেন জড়িত। সে স্টকগুলো তারা সরকারি যে বিভাগে কাজ করেন তাদের সিদ্ধান্তে উঠানামা করে। তা প্রমাণ করে যে, অনেক সময় রাষ্ট্র ও জনগণের সংকট এক শ্রেণীর ব্যক্তিদের উপার্জনের সুযোগে পরিণত হয়। ২০২০ সালের প্রথম দিকে মার্কিন জনসাধারণ করোনা ভারী অবস্থা বুঝতে পারেন নি। সে সময় মার্কিন জাতীয় অ্যালার্জি এবং সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রথম উপ-মহাপরিচালক হাগ অচিনক্লোস অনেক স্টক ও ফান্ড বিক্রি করেছেন। মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানব সেবা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে সে বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্টক ও ফান্ড বিক্রির পরিমাণ তার আগের ১২ মাসের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি ছিল। 

 মার্কিন কংগ্রেসে এ অবস্থা কম নয়। তবে, এক মাস আগেই মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের ৯৭ জন সদস্যের ফটো নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপানো হয়। এ সংখ্যা কংগ্রেসের মোট সদস্যের সংখ্যার প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ। নিউইয়র্ক টাইমসের জরিপ থেকে জানা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের সদস্যরা যে স্টক লেনদেন করার ঘোষণা করেছে, সে সব স্টক তাদের কাজের সঙ্গে নিবিঢ়ভাবে জড়িত। তারা যে সময় স্টক লেনদেন করেছে, সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণের সময় এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়।

যেমন, মিনেসোটার প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ডিন ফিলিপস প্রতিনিধি পরিষদের আর্থিক সেবা কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালনের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিটির শুনানিতে হাজির হওয়ার প্রাক্কালে চারটি ব্যাংকের স্টক বিক্রি করেছেন।
 মার্কিন রাজনৈতিক মহলের ‘স্টকগড’-এর খবর ফাঁসের কারণে সমাজে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ব্যাঙ্গর ডেইলি নিউজ পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “তা যথেষ্ট! স্টক লেনদেনে আইন প্রণয়ন করতে হবে”। নিউইয়র্ক টাইমস মনে করে, মার্কিন রাজনীতিকরা নিজেদের স্বার্থকে দেশ ও জনগণের স্বার্থের আগে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তাতে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমেছে। 

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন রাজনীতিকরা কেন অসাধু উপায়ে সরকারি পদের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ অর্জন করেন? তার প্রত্যক্ষ কারণ হলো বর্তমানে দেশটিতে নীতিগত বাধ্যবাধকতার অভাব রয়েছে। ২০১২ সালের ‘কংগ্রেসের তথ্যে লেনদেন বন্ধ বিল’ অনুযায়ী, কংগ্রেসের সদস্য ও কর্মচারীরা পদের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ অর্জন করতে পারেন না, তা  নিষিদ্ধ। যদি তাদের লেনদেনের পরিমাণ ১০০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ৪৫ দিনের মধ্যে বিষয়টি জানাতে হয়। তবে, এ নীতি মেনে চলা সদস্য প্রায় নেই বললে চলে। আর এ নীতি ভাঙলে কেবল ২০০ ডলার জরিমানা দিতে হয়। 

এই শিথিল নীতিগত পরিবেশে মার্কিন রাজনীতিকরা অভ্যন্তরীণ তথ্য কাজে লাগিয়ে শেয়ার বাজারে যা ইচ্ছা, তা-ই করতে পারছে। একই সঙ্গে মার্কিন সরকার এ ধরণের কর্মকাণ্ডকে আশ্রয় দেয়। যেমন, করোনা মহামারির প্রথম দিনে সিনেটর রিচার্ড বুরসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যাপক হারে স্টক বিক্রিতে জনগণ দৃঢ় অসন্তোষ প্রকাশ করলেও এক বছরের তদন্তের পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন আইন বিভাগ।


কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, মার্কিন রাজনীতিকরা অভ্যন্তরীণ তথ্য কাজে লাগিয়ে স্টক লেনদেন করেন। তা হয়ত বন্দুক সহিংসতা ও রাজনৈতিক ঘুষের মতো মার্কিন সমাজের ক্যান্সারে পরিণত হবে। গ্যালপের সর্বশেষ জরিপ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে মার্কিন জনগণের দেশটির কংগ্রেসের প্রতি আস্থার হার সর্বনিম্ন ৭ শতাংশে নেমেছে।সূত্র :সিএমজি।