NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, মে ৪, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo
হিজাব না বিকিনি, না দুটোই?

মিনহাজের ছবি ও কথা / Minhaz’s Pics & Talks


Minhaz Ahmed প্রকাশিত:  ০৩ মে, ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম

মিনহাজের ছবি ও কথা / Minhaz’s Pics & Talks

 

 

হিজাব না বিকিনি, না দুটোই?

সেদিন একটা ভিন্ন রকমের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। মেক-আপ ওয়ার্কশপ সমাপনী, অংশগ্রহণকারীদের সনদপত্র প্রদান, ফ্যাশন শো, দুজন শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনা, সাথে রাতের খাবার। বাড়তি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা পিয়া বিপাশাও?

ভিন্নধর্মী এই কারণে যে, যিনি ওয়ার্কশপ পরিচালনা করলেন, তিনি একজন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সেলিব্রিটি মেক-আপ আর্টিস্ট। তিনি নিজে অনেক নামী-দামী তারকাদের মেক-আপ করা ছাড়াও আমাদের দেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে নারীদেরকে সৌন্দর্য-সচেতন করার লক্ষ্যে এই শিল্পটির প্রসারেও বিশাল ভূমিকা রাখছেন।�

অনুষ্ঠানটি এক ধরনের প্রদর্শনীর মতো ছিল। একজন মেক-আপ আর্টিস্ট যেসব শিক্ষার্থীদের এই শিল্পটি শেখালেন, তিনি তার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিছু মডেলদেরকে বেছে বেছে মানানসই পোশাকে ও গহনায় সাজালেন। আর সেই মডেলরা শিল্পীত ভঙ্গিমায় শরীর কোমর দুলিয়ে বিড়ালহাঁটা হেঁটে গেলেন। মেয়েদের দেহের নানান ভঙ্গিমার মাঝে একটা প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছিল, সেটা হলো, মডেলগণ বহু অনুশীলনীর মাধ্যমে নিজেদের দেহকে যেমন মেদহীন-চিকনাচিকন সুন্দর, আকর্ষণীয়, মোহনীয় করে গড়ে তুলেছেন। সেই দেহকে রূপময় করে সাজিয়েছেন মেক-আপ শিল্পীরা। পোশাক এবং অলঙ্কার ডিজাইনারগণও সেই দেহগুলোকে কিছু-দেখানো, কিছু-লুকানো পোশাকে ও গহনায় রহস্যময়ীভাবে সজ্জিত করে উপস্থাপন করলেন।�

অনুষ্ঠানের কেন্দ্রীয় চরিত্র মারিয়া মৃত্তিকা, ওরফে ইসরাত জাহান মারিয়া। তিনি নিজে হিজাব পরেন। চোখ-নাক-মুখ ব্যতীত পুরো শরীর তার ঢাকা। চুল ও মাথা ঢাকা হিজাব নামক মানানসই একটুকরো কাপড়ে। বেশ স্ববিরোধী না? আমার কাছে এই প্রকাশ্য স্ববিরোধটাকেই বেশি গৌরবের ও ব্যতিক্রমী বলে মনে হয়েছে(*)। কারণ এর মাধ্যমে একটা জিনিস স্বীকৃত হচ্ছে যে, দেহ যার, সিদ্ধান্ত তার। দেহের মালিক তার নিজের দেহ প্রদর্শন করবে কি না, করলে কতটুকু প্রদর্শন করবে, সে সিদ্ধান্ত এককভাবে গ্রহণ করার অধিকার তার আছে। কেউ নিজে হিজাব পরবেন কি না, দেহ প্রদর্শন করবেন কি না, সেটা ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার। হিজাব পরার, কিংবা কোনো বিশেষ রকমের পোশাক পরার বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রচেষ্টা মানেই মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা। রাষ্ট্রের আইন হোক, সমাজ হোক, ধর্ম হোক, কেউই মানুষের এই জন্মগত অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। �পোশাকের সাথে ধর্ষণের সম্পর্ক দেখিয়ে অনেকে দেহ ঢেকে রাখতে সুপারিশ করেন, চাপ দেন। এটা একটা খোঁড়া যুক্তি। কারণ, দেহ প্রদর্শনীর সাথে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। ধর্ষণের সাথে সম্পর্ক বিকারগ্রস্থ, কামুক, অসুস্থ মানসিকতার মানুষদের। এই এদের জন্যই আমাদের সমাজে নারীরা বৈষম্য, বঞ্চনা, শোষণ, নির্যাতনের শিকার। এদের কাছে শিল্প-সংস্কৃতি-ইহজাগতিকতার কোনো মূল্যই নেই। এদের কাছে সঙ্গীত-গল্প-কবিতা-চলচ্চিত্র-জ্ঞানবিজ্ঞান অর্থহীন। তাদের জীবন হলো অন্ধ ছঁকবাধা জীবনের দাসত্ব। এদের বিনোদন স্ত্রী কিংবা স্ত্রীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা না করে যখন-তখন তাদের উপর উপগত হওয়া এবং বংশ বিস্তার করা।�

শিরোনামে যে প্রশ্নটি করা হয়েছে (হিজাব না বিকিনি, না দুটোই?), তার উত্তর পাঠকভেদে ভিন্ন ভিন্ন হবে, সন্দেহ নেই। পাঠকরা কে কী উত্তর দেবেন, সেটা জানিনা, তবে আইনত মানবাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া পৃথিবীর সর্বত্র যা হওয়া উচিত, সে উত্তরটা হলো- দুটোই।

অনুষ্ঠানটি আমার ভালো লেগেছে, তাই আয়োজক মিলি খান ও বশির খানকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ মারিয়া মৃত্তিকাকে। তিনি যে নারীদেরকে শুধু তাদের দেহের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন করছেন, তা নয়, তিনি তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হতে, প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, অধিকার সচেতন হতে, এবং আত্মমর্যাদা অর্জন করতে শিক্ষা দিচ্ছেন।

আয়োজনটা যে ব্যতিক্রমী ছিল, সেটা বুঝাতে আমি অনুষ্ঠানের কিছু ছবি এখানে পোস্ট করলাম।

(*) মারিয়া মৃত্তিকা, ওরফে ইসরাত জাহান মারিয়া যদি নিতান্ত পেশার বা অর্থ উপার্জনের ধান্ধা হিসেবে হিজাব সংক্রান্ত স্ববিরোধকে অনুমোদন দিয়ে থাকেন, তাহলে বলবো, এই স্ববিরোধ মোটেও গৌরবের নয়, বরং তা কলঙ্কের।