NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, রবিবার, মে ৪, ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২
Logo
logo

হুমায়ূন কবীর ঢালীর গল্প-উপন্যাস-- আমীরুল ইসলাম


খবর   প্রকাশিত:  ০৪ মে, ২০২৫, ১০:২৯ এএম

হুমায়ূন কবীর ঢালীর গল্প-উপন্যাস-- আমীরুল ইসলাম

হুমায়ূন কবীর ঢালীর গল্প-উপন্যাস
আমীরুল ইসলাম

১.
সদা হাস্যময় প্রাণবন্ত এক লেখক হুমায়ূন কবীর ঢালী। অসম্ভব জীবনবাদী তিনি। ‘রসিক’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ আমি খুঁজে পাই ঢালীর কথাবার্তা ও আচার আচরণে।
ঢালী কেমন মানুষ? সরল। আটপৌহর। যেন গ্রাম থেকে উঠে আসা এক মৌলিক চরিত্র। আদিম মানুষ তিনি। কোনো সংস্কার নেই। হয়তো দেখা যেতে পারে নিউইয়র্কের রাস্তায় লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরে ঢালী হেঁটে বেড়াচ্ছে। ঢালী সহজ সরল। কোনো অহং বা গরিমা তার নেই। ঢালীর সঙ্গে বহুবার কলকাতা গ্র্যান্ড হোটেলে সকালের নাস্তা। সুইমিংপুলের পাড়ে বসে আড্ডা। ঢালীর সঙ্গে জ্যাকশন হাইটস। ডাই ভারসি প্লাজা। নিউইয়র্কে মুক্তধারা আয়োজিত বইমেলা। ইত্যাদি রেস্টুরেন্টে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা। ঢাকার বইমেলা প্রাঙ্গণেও ঢালীর সাথে কত আড্ডার মধুর স্মৃতি। ঢালী আমাদের সবারই প্রিয়। তার সলজ্জ মধুর ব্যবহার সবার মন জয় করে ফ্যালে। ধ্রæব এষ, ইসহাক খান প্রমুখ ঢালীর আত্মজন। আমি ঢালীর সরল ও মধুর ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যাই। ঢাকার অদূরে ঢালীর পৈত্রিক বাড়ি। সিকিরচর তার গ্রামের নাম। সেখানে যে একটা লাইব্রেরি গড়ে তুলেছে। ঢালীর সঙ্গে যখনই দেখা হয় তার আন্তরিক হাসিমুখ সাদর সম্ভাষণ জানায় আমাদের। শত দারিদ্র্য, অভাবেও ঢালীর মুখের হাসি ম্লান হয় না। ঢালীর হৃদপিণ্ডতে সমস্যা আছে। ভ্রুক্ষেপহীন, পরোয়াহীন সে। বাঁধন ছেঁড়া এক আনন্দময় চরিত্র আমাদের হুমায়ূন কবীর ঢালী । লেখককে নাকি খুঁজে পাওয়া যায় তার ব্যক্তিত্বের আড়ালে। লেখক ঢালী আর ব্যক্তি ঢালী সমার্থক। হাসাকে বুঝতে পারলেই তার লেখা উপলব্ধি করাও আমাদের জন্য সহজ হবে।
২.
হুমায়ূন কবীর ঢালী ছোটদের বড়দের মিলিয়ে অনেক বই লিখেছেন। প্রায় নব্বইটি। ছোটদের জন্য উপন্যাস আর গল্পের বই মিলিয়ে প্রায় ষাটটি বই, ভাবা যায়? ঢালী, আপনি লেখেন কখন? বিপুল ও অজস্র তার রচনা। গ্রামীণ পটভূমিতে সামাজিক গল্প-উপন্যাস, ভূত, রহস্য, কাটুস কুটুস সিরিজ, মুক্তিযুদ্ধ, রূপকথা, নানা ধরনের লেখাই তিনি শিশুসাহিত্যে উপস্থাপন করেছেন। ইতিমধ্যে তিন খণ্ডে তার কিশোরসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। ভেবে অবাক হই, প্রকাশনা ব্যবসা, ভ্রমণ, আড্ডা, সংসার এতকিছু নিয়ে চরম ব্যস্ত থাকে ঢালী। এত এত লেখা সে লিখল কখন? ঢালীর বিপুল শিশুসাহিত্যের রচনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই। গদ্য লেখার মতো কঠিন কাজ সে অনায়াসে করে থাকে।
হুমায়ূন কবীর ঢালীকে মূল্যায়ন না করে উপায় নেই?
৩.
ঢালীর 'সব লেখা ছোটদের'। বইটা হাতে পেয়ে পড়া শুরু করলাম। খুব উপেক্ষিত শিশুসাহিত্যিক সে। হাস্যরস আর কৌতুকমাখা আড্ডাবাজ বলে আমরা তার লেখার মূল সুরটি কোনোদিন উপলব্ধি করার চেষ্টা করিনি। তাকে বড় অবহেলা করা হয়েছে। ঢালী তার লেখক জীবনের সূচনায় হয়তো কিছু দুর্বল রচনা লিখেছিল। তখন তার নির্মাণ পর্ব। কিন্তু আজ ঢালী নিজেকে অনেক দূর অতিক্রম করেছে। সে এখন খাঁটি শিশুসাহিত্যিক।
গ্রামের সরল ও সাধারণ জীবন ঢালীর খুব কাছ থেকে দেখা আছে। ‘লজিং বাড়ি’ উপন্যাসে তার নমুনা পাওয়া যায়। ঢালীর অনেক লেখাতেই গ্রাম বারবার চিত্রায়িত হয়েছে। আমাদের লেখকদের জীবন অভিজ্ঞতা কম। তাই শিশুদের জন্য ভূত প্রেত ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লিখে শিশুদের কাছে শর্টকাট পথে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে চান।
গ্রামীণ জীবনের নানা উপাখ্যান ঢালীর অভিজ্ঞতার মধ্যে আছে। আমার অনুরোধ, গ্রাম জীবনের প্রেক্ষাপটে ঢালী আরও গল্প-উপন্যাস লিখবে। কারণ সেগুলো হবে আমাদের শিশুসাহিত্যের চিরস্থায়ী সম্পদ। ‘কাটুস কুটুস’ সিরিজটিও আমাকে খুব আকর্ষণ করেছে।
হুমায়ূন কবীর ঢালী একজন শক্তিমান শিশুসাহিত্যিক। এ ব্যাপারে দ্বিধা নাই। তিনি পাদপ্রদীপের আড়ালে থাকেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস এদেশের সাহিত্য আলোচকেরা ঠিকই একদিন হুমায়ূন কবীর ঢালীর প্রকৃত মূল্যায়ন করবেন।
...................................................
সপ্তডিঙা থেকে প্রকাশিতব্য শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম-এর
‘শিশুসাহিত্যের আলোছায়া’ গ্রন্থের একটি লেখা