অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শেষ হয়েছে। ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠকটি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় শেষ হয়। বৈঠক শেষে তারেক রহমান ডরচেস্টার হোটেল ত্যাগ করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, তাদের মধ্যে একান্তে এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে উভয়পক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে আগেই জানান শফিকুল আলম। এর আগে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন বৈঠক শুরুর কথা জানিয়েছিলেন।
তারেক রহমান হোটেলের সামনে পৌঁছালে তাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম স্বাগত জানান। আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময়-বিতর্কের মধ্যে বৈঠকটি হলো। গত বছরের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার প্রথম সাক্ষাৎ বা বৈঠক। গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, নির্বাচনের সময়সহ বহু অমীমাংসিত বিষয় সামনে রেখে এ বৈঠককে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে লন্ডনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ব্রিফিং করতে পারেন বলে জানা গেছে। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলটির দিক থেকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, সে সম্পর্কে তারেক রহমানকে দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কিছু মতামত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, নির্বাচনের সময়। প্রধান উপদেষ্টা পবিত্র ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, লন্ডন বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে সে ‘সময়সীমা’ পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের দাবি থেকে কিছুটা সরে আসবে, যাতে সরকার আরেকটু এগিয়ে আসে।
বিএনপি মনে করে, এপ্রিল মাস ভোটের জন্য উপযোগী সময় নয়। কারণ, এই সময়ে প্রচণ্ড গরম আবহাওয়া থাকে, ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। তার আগ দিয়ে রোজা ও ঈদুল ফিতর। এমন সময়ে ভোট করতে গেলে রমজান মাসেও নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হবে। তাই বিএনপি আশা করে সরকার ভোটের সময় এগিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে। তবে সরকার এপ্রিলে অনড় থাকলে বিএনপির পক্ষে মানা কঠিন হবে। এ ছাড়া আরও দুটি বিষয় এই বৈঠকে আসতে পারে বলে জানা গেছে। একটি হচ্ছে, সরকার থেকে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়া।
সরকারের তিনজন উপদেষ্টার ব্যাপারে বিএনপি এর আগে যে আপত্তি জানিয়েছিল, সে বিষয়টি এ বৈঠকেও তুলতে পারেন দলের শীর্ষ নেতা। কারণ, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেওয়া উচিত। অপর বিষয়টি হলো- সরকার ও প্রশাসনে থাকা বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বা দোসরদের দায়িত্ব থেকে সরানো। এ ছাড়া বিএনপির নেতারা ধারণা করেন, বহুল আলোচিত ‘সংস্কার’ প্রসঙ্গ বৈঠকে উঠতে পারে।
তবে বিএনপির শীর্ষ নেতা নিজ থেকে এটি আলোচনায় তুলবেন না। প্রধান উপদেষ্টার দিক থেকে যদি সংস্কারের কোনো বিষয় আলোচনায় তোলা হয়, সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইতিমধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়েছে। যদিও সরকারের দিক থেকে বৈঠকে কী কী বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বে থাকা তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা মনে করেন, মৌলিক সংস্কার ও জুলাই আন্দোলনে নির্বিচার মানুষ হত্যার বিচারের মতো বিষয়গুলো বৈঠকে বেশি গুরুত্ব পাবে। ফলে নির্বাচন, সংস্কার, জুলাই ঘোষণাসহ নানাবিধ কারণে সরকার ও বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার এই বৈঠক ঘিরে সব মহলে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়েছে।