কুলাউড়াবাসীর প্রিয় মুখপত্র মানব ঠিকানা রজতজয়ন্তী অতিক্রম করল। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ও বহির্বিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত জননন্দিত বাংলা সংবাদপত্র ‘ঠিকানা’র সহযোগী প্রকাশনা হিসেবে ১৯৯৭ সালের ১০ নভেম্বর কুলাউড়ায় যাত্রা শুরু করে মানব ঠিকানা। পত্রিকাটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এর অগণিত পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।মহান একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে দেশের সাথে প্রবাসের সেতুবন্ধ রচনা, প্রবাসীদের সুখ-দুঃখের কথামালা তুলে ধরা, বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার বিরাট লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের রাজধানী খ্যাত নিউইয়র্কে আত্মপ্রকাশ করে প্রথম সাপ্তাহিকী ‘ঠিকানা’।৩৩ বছরের অবিরাম পথচলায় ঠিকানা তার লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি সফল বলে প্রবাসীসহ সর্বশ্রেণির পাঠকের অভিমত।

ঠিকানার পথচলার ৭ বছর পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি কুলাউড়াকে দেশ-বিদেশে সুপরিচিতি দান, এখানকার নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরা, চা বাগান-পাহাড়-টিলা-হাওর-বাঁওড়ের সুখ-দুঃখের কথামালা ছাপার অক্ষরে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে মানব ঠিকানা। আজ থেকে ২৫ বছর আগে প্রত্যন্ত একটি উপজেলা থেকে পত্রিকা প্রকাশনার কাজটি শুধু কঠিনই ছিল না, ছিল অনেকটা সাঁতরে সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো বন্ধুর। কারণ সেই সময়ে কুলাউড়ায় হাতে গোনা দু’জন সাংবাদিক থাকলেও একজন একটি দৈনিক এবং অন্যজন একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। আর এখনকার মতো তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ সুবিধার বিষয়টি তো ছিল কল্পনারও অতীত। তাই মানব ঠিকানার পথচলাকে মসৃণ করতে হাজারো সীমাবদ্ধতা ডিঙানোর পাশাপাশি কুলাউড়ায় সাংবাদিক তৈরির কাজটিও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে করতে হয়েছে। এই অসাধ্য সাধনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন মানব ঠিকানার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জাবেদ খসরুসহ ঢাকা অফিসে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি।

কুলাউড়ায় সাংবাদিক তৈরির মিশনে সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হিসেবে বরাবরই আমার অনুপ্রেরণা আর সার্বিক সহযোগিতা ছিল। সকলের অক্লান্ত প্রচেষ্টা আর পরিশ্রমে বছর না ঘুরতেই মানব ঠিকানা হয়ে পড়ে ঐ অঞ্চলের একমাত্র মুখপত্র। কারণ তখনকার সময়ে বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে কালেভদ্রেও কুলাউড়ার কোনো সংবাদ জাতীয় কোনো পত্রিকায় স্থান পেত না। মানব ঠিকানা পাঠকের সেই অতৃপ্তি দূর করে তাদের মনের খোরাক জুগিয়েছে বছরের পর বছর।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল উপজেলাসহ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায় থেকেও সাংবাদিক বের করে এনেছে মানব ঠিকানা। পত্রিকাটি কেবল কুলাউড়া থেকেই এ পর্যন্ত শতাধিক সাংবাদিক সৃষ্টি করেছে, যাদের অনেকেই আজ দেশ-বিদেশের বড় বড় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সম্মান ও দাপটের সঙ্গে সাংবাদিকতা করে চলেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো, মানব ঠিকানার মাধ্যমে যাদের সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি, মানব ঠিকানা যাদের হাতেকলমে শিখিয়েছে সাংবাদিকতার অ আ ক খ, তাদের অনেকেই আজ নিজেদের শেকড়কে অস্বীকার করে জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে তাদের হাতে খড়ি হয়েছে বলে দাবি করছেন। তাদের এই অস্বীকার কেবল নির্লজ্জতাই নয়, অকৃতজ্ঞতারও বহিঃপ্রকাশ। অনেকটা কৃষকের অকৃতজ্ঞ ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর সমাজে বাবাকে বাবা বলে পরিচয় না দেওয়ার মতো। ওই সাংবাদিকরা হয়তো মনে করছেন, জাতীয় কোনো পত্রিকার মাধ্যমে হাতে খড়ি হওয়ার বিষয়টি প্রচার করা হলে সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, মফস্বল পর্যায়ের একটি পত্রিকার মাধ্যমে হাতে খড়ি হয়ে কোনো সাংবাদিক যদি জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকের যোগ্যতা অর্জন করেন, তাহলে সেটা প্রচার করা হলে তার মর্যাদা বাড়বে বৈ কমবে না।

মানব ঠিকানা বছরের পর বছর কুলাউড়াবাসীর একমাত্র মুখপত্র হিসেবে নিয়মিত পাঠকের কাছে হাজির হয়েছে। বর্তমানে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পত্রিকাটি অনিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে সময়-সুযোগ এলে মানব ঠিকানা আবারো কুলাউড়াবাসীর কাছে নিয়মিত হাজির হবে। বর্তমানে পত্রিকাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি রইল শুভ কামনা। বিগত ২৫ বছরের বিভিন্ন সময়ে ঢাকা এবং কুলাউড়াসহ মৌলভীবাজারের নানা স্থান থেকে যেসব সাংবাদিক-কর্মকর্তা শ্রম, মেধা ও মূল্যবান সময় দিয়ে মানব ঠিকানার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন, রজতজয়ন্তীর এই শুভলগ্নে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।মানব ঠিকানা কুলাউড়াবাসীর সেবায় যুগ যুগ নিয়োজিত থাকুক-এই কামনা করছি।