NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, সোমবার, জুন ২, ২০২৫ | ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২ এর গভর্নর পদে প্রথম বাংলাদেশি আসেফ বারী টুটুলের ঐতিহাসিক বিজয় ও সংবর্ধনা অবৈধভাবে পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ চারদিনব্যাপী নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক ৩৪তম বাংলা বইমেলা সমাপ্ত বাংলাদেশি প্রবাসীদের আনন্দঘন পরিবেশে কুইন্সে পালিত হলো ইউ এস এ ৯৭-৯৯ এর পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে সামরিক স্থাপনা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে চীন, জানাল যুক্তরাষ্ট্র 'To achieve great things, we must dream big and take action to pursue them' চারদিনব্যাপী নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা ৩৪তম বইমেলা শুরু ৩৪তম নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা শুরু ২৩শে মে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন ফিলিস টেইলর, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম, বীর প্রতীক  এবং সাদাত হোসাইন ৮ মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে: মির্জা আব্বাস
Logo
logo
চীন

পরিশ্রমীদের আবাস চীনের ফু চিয়ান


শিশির, বেইজিং: প্রকাশিত:  ০১ জুন, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম

পরিশ্রমীদের আবাস চীনের ফু চিয়ান
ফু চিয়ান দক্ষিণ চীনে অবস্থিত এবং তাইওয়ান প্রদেশের সবচেয়ে কাছের একটি প্রদেশ। সেখানে আমি যথাক্রমে ফুল, চা ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের গল্প শুনেছি, যা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। সফরের প্রথম দিন আমি গিয়েছি ইউং ফু জেলায়। সেখানকার ফুল চাষের ইতিহাস ৭০০ বছরের প্রাচীন। চীনে বিক্রি-হওয়া ৮০ শতাংশ আজেলিয়া ফুল সেখানে চাষ হয়। ২০২১ সাল পর্যন্ত ইউং ফু জেলায় ফুল চাষের জমির আয়তন ১৯৯৭ সালের ২০০ হেক্টর থেকে বেড়ে ৩,০০০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার মোট ৫,০০০ পরিবার ফুল চাষ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে। এ শিল্পের অর্থ মূল্য ৪১.৯ কোটি ইউয়ান যা প্রায় ৪৫৬ কোটি টাকা। চীনে ইন্টারনেট জনপ্রিয় হয়ে উঠার সাথে সাথে স্থানীয়রা অনলাইনে ফুল বিক্রি শুরু করেন। আমি ইউং ফু ই-কমার্স কমিটির চেয়ারম্যান চেন শো সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তরুণ এই ব্যবসায়ী ৪-৫ বছর আগে চীনের কুয়াং চৌ নগরী থেকে ইউং ফু জেলায় ফিরে আসেন এবং বেচাকেনার জনপ্রিয় অ্যাপলিকেশন ‘টিমলে’ একটি ফুলের দোকান খুলেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, সাধারণত প্রতিদিন তারা ৩০ হাজার অর্ডার পান। আর পূর্ণ মৌসুমে তা ৮০ হাজারে পৌঁছায়। অনলাইন দোকান ছাড়া, টিকটকসহ সামাজিক মাধ্যমেও ফুল বিক্রি এখন জনপ্রিয়। আমি স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী চেং চিয়ান ওয়ে -এর গ্রীনহাউসে গিয়েছি। তার বাবা ফুল ব্যবসা শুরু করেন; সেই থেকে তার পরিবার এ ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন।সেখানে দু’জন মেয়ে লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফুল বিক্রি করছিলেন। চেন চিয়ান ফুর স্ত্রী একজন ফুলের স্টাইলিস্ট । তিনি ফুলকে নানা আকারে তুলে ধরেন। ফলে ফুল আরও উচ্চ দামে বিক্রি হয়। উনি আমাকে কিছু স্টাইলিং কৌশল শিখিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত তার স্টাইল করা একটি ফুলের দাম এক থেকে দশ হাজার ইউয়ানের বেশিতে বিক্রি হয়। সফরের দ্বিতীয় দিন চলে যাই তুং হু নামের একটি গ্রামে। তুং হু একটি হ্রদের নাম। আর এ হ্রদের নাম অনুযায়ী গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে।সেখানকার ৯০ শতাংশ হল বন। গ্রামটি পাহাড়ের কোলে অবস্থিত। উপর থেকে দেখলে একে একটি পদ্মফুলের মতো মনে হয়। পাহাড় যেন পদ্মফুলের পাপড়ি; আর গ্রামের ঘরগুলো যেন তার অসংখ্য পাতা। রাইস নুডলস স্থানীয় বিখ্যাত একটি খাবার, যার ৮০০ বছরের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। উৎসব বা গুরুত্বপূর্ণ দিনে স্থানীয়রা রাইস দিয়ে নুডলস তৈরি করেন। নুডলস তৈরির সময় প্রতিবেশীরা এসে সাহায্য করেন। পুরুষরা কাঠ দিয়ে চাল ম্যাশ করেন । তা করতে প্রতিবার চারজন পুরুষ দরকার হয়। চারজনের একটি গ্রুপ পালাক্রমে এ কাজ করেন। এটি আসলে বেশ শ্রমসাধ্য কাজ; তাই চারজন প্রতিবার মাত্র টানা ১০-১২ মিনিটের মতো কাজ করতে পারেন। তাছাড়া, তুং হু গ্রামে ২০০-৫০০ বছরের প্রাচীন বাড়িঘর রয়েছে। স্থানীয়রা এখনও এসব বাড়িঘরে বাস করেন। এসব বাড়িঘর মূলত মিং ও ছিং রাজবংশ আমলে নির্মিত। এখন গ্রামটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটি অংশ হল পুরাতন বাড়িঘরে ভরপুর। সেখানে সব আগের মতোই সংরক্ষিত আছে। আর দ্বিতীয় অংশটিতে একটি আধুনিক পর্যটন এলাকা নির্মিত হয়েছে। ড্রিফটিং, কাচের সেতু ও গোলকধাঁধাসহ নানা আধুনিক বিনোদন স্থাপনা রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি, গ্রামে শিক্ষার্থী ও কলাশিল্পীদের জন্য বিশেষ একটি হোটেল আছে। ছুটির সময়ে তারা এখানে এসে স্কেচ করেন। সুন্দর এ প্রাকৃতিক দৃশ্য স্কেচ অনুশীলনের জন্য বেশ উপযোগী। ফু চিয়ান চীনের বড় একটি চা উৎপাদন কেন্দ্র। ফু চিয়ানে থাকার সময় আমি প্রতিদিন অন্তত তিন বার চান পান করেছি। ফু চিয়ানের বিভিন্ন জায়গায় চাষ হয় নানা প্রজাতির চা। যে চা বাগানে আমি গিয়েছি, সেখানে চাষ হয় তাইওয়ানের স্থানীয় চা। ইউং ফু জেলার একটি পাহাড় আছে, সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভৌগলিক অবস্থার তাইওয়ানের আলি পাহাড়ের সঙ্গে অনেক মিল আছে। তাই তাইওয়ান থেকে আসা চা চাষিরা সেখানে চা চাষ করেন। তারা এখানে ২০ বছরের মতো সময় ধরে চা চাষ করছেন। চা শিল্পের উন্নয়ন স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। জানা গেছে, চা পাতা তোলার সময় শ্রমিকরা প্রতিদিন মাথাপিছু কমপক্ষে ১৫০ ইউয়ান, যা প্রায় ১৯৫০ টাকা পেয়ে থাকেন। আর এই সময়টি ২০-৩০ দিন দীর্ঘ হয়। বছরে তারা দুই বা তিন বারের মতো চা তোলেন। প্রতিবছর তাদের বেতন হিসেবে ১০ কোটি ইউয়ান বা প্রায় ১৩০ কোটি টাকা প্রদান করেন তাইওয়ানের ব্যবসায়ীরা। তাইওয়ানের তুলনায় এখানে তারা আরও বেশি ভূমিতে চা চাষ করতে পারেন। আর এখানকার চায়ের মানও বেশ ভাল হয় বলে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীর অনেক লাভবান হন। স্থানীয় সরকার চা শিল্পের সমর্থনে তাইওয়ানের ব্যবসায়ীদেরকে অনেক সুবিধা দিয়েছে। যেমন: ভর্তুকি ঋণ, রাস্তাসহ অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। তাইওয়ান থেকে আসা চা ব্যবসায়ীরা স্থায়ীভাবে ইউং ফু জেলায় বাস করেন এবং তারা হলেন তাইওয়ান প্রণালীর দু’পাশের মানুষদের মধ্যকার সুসম্পর্কের প্রতীক। কয়েক দিনের ভ্রমণ কথা স্বল্প সময়ে বলে শেষ করা যাবে না। ফু চিয়ানের মানুষেরা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। কারণ আমি দেখেছি, তারা কত পরিশ্রমী। স্থানীয় এক সরকারী কর্মকর্তা বলেছেন, ফু চিয়ানে যদি আপনি কিছু করতে চান, তাহলে কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বরং লাভবান হবেন। এটি সত্যিই আমি সেখানে কোনো অলস মানুষ দেখিনি। সবাই সমৃদ্ধ জীবনের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সবাইকে নিয়ে সামনে যাচ্ছে তাদের বয়স খুব কম। তাই আমি বিশ্বাস করি ফু চিয়ান এবং চাং পিং শহরের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। সূত্র: সিএমজি।