আলাউদ্দিন উল্লাহকে আমেরিকার মূলধারার সবাই চেনে একজন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে। হাসান মিনহাজ, রিজ আহমেদ কিংবা আজিজ আনসারীর আগেই জনপ্রিয়তা পান তিনি তাঁর ‘ ডিশওয়াশার ড্রিমস’ শোয়ের কারণে। সারাজীবন একটা রেস্টুরেন্টের মালিক হবার স্বপ্ন দেখা তাঁর বাবা চিরবিদায় নেন ‘ডিশওয়াশার’ হিসেবেই।
হারলেমে সরকারী বাসভবনে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে ‘হিপ হপ’ গানের তালে বড় হয়ে ওঠা আলাউদ্দিন বাবার ব্যর্থ স্বপ্নের কথা জানতেন, জানতেন না তাঁর সাহসিকতার কথা! ইতিহাসবিদ ভিভেক বাল্ডের সঙ্গে পরিচয়ের পরে ও নিজের শিকড় অনুসন্ধানে ব্রতী হয়। ১৯২০ সালের দিকে যে সব সাহসী বাঙালি চলন্ত জাহাজ থেকে অকুল সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আলাউদ্দিন উল্লাহ’র বাবা হাবিব উল্লাহ ছিলেন তাদেরই একজন।
শনিবার ২৭ মে হারলেমের মেসেলেজ ডকুমেন্টারি সেন্টারে দেখার সুযোগ হল ‘ইন সার্চ অব বেঙ্গলি হারলেম’ তথ্যচিত্রটি। সেই সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ ঘটল বিখ্যাত স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান আলাউদ্দিন উল্লাহ ও ইতিহাসবিদ ভিভেক বাল্ডের সঙ্গে। দুজনে মিলেই এই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন।
এই হারলেমে জন্ম ও বড় হয়েছেন আলাউদ্দিন। আফ্রিকান আমেরিকান রেঁনেসার সূচনা হয়েছিল এই হারলেমে। আমার এস্টোরিয়ার বাসা থেকে ড্রাইভ করে গেলে খুব বেশী দূরে নয়। তবে ট্রেনে গেলে ঘুরে যেতে হয়। হারলেমে গিয়ে প্রচুর পুরনো ভবন চোখে পড়ল। সিনেমা হলটিও সেরকম। তথ্যচিত্রটি দেখার জন্য সব ধরনের রেসের মানুষ উপস্থিত ছিল। কারণ আগেই বলেছি আলাউদ্দিন উল্লাহ আমেরিকার মূলধারাতেও এক পরিচিত মুখ।
আলাউদ্দিনের বাবা হাবিব উল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশের নোয়াখালির মানুষ। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে পশ্চিমবাংলা ও পূর্ববাংলার বহু মানুষ জাহাজে খালাসির কাজ করতো। হাবিব উল্লাহসহ অনেকে সেই সময় জাহাজ থেকে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন আমেরিকার উন্নত জীবনের আশায়।
তখন আমেরিকায় অভিবাসীরা নিষিদ্ধ ছিল। হাবিব উল্লাহ অনেক জায়গা ঘুরে ইস্ট হারলেমে এসে থিতু হন। বিয়ে করেন সেখানকার পূয়ের্তিকান নারীকে। এভাবে হাবিবউল্লাহর মতো শিপ জাম্পারদের মাধ্যমেই আমেরিকায় বাঙালি বসতির সূচনা হয়, যার শিরোনাম দেয়া যায়- ইস্ট বেঙ্গল থেকে ইস্ট হারলেম।
হাবিবউল্লাহর বয়স যখন ষাট বছর তখন পুয়ের্তিকান স্ত্রীর মৃত্যু হয়। বেশী বয়সে নিজের দেখাশুনা করার জন্য নোয়াখালিতে গিয়ে ২০ বছর বয়সী একজন তালাকপ্রাপ্ত নারীকে বিয়ে করেন। সেই নারীর নাম ছিল মহিমা। যিনি দুই পুত্রের জন্ম দেন, একজন জব্বার উল্লাহ, আরেকজন এই আলাউদ্দিন উল্লাহ।
নিজের শৈশব নিয়ে অকপট স্মৃতিচারণে আলাউদ্দিন উল্লাহ বলেন কিভাবে ওর বন্ধুরা ওর বাবাকে ‘দাদু’ ভেবে ভুল করতো। কিভাবে সেই ষাট ও সত্তরের দশকে একজন গ্রাম্য-ধর্মভীরু মাকে ও ইংরেজী শেখাতো। কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে মিশে নিজের শিকড়ের কথা ভুলে গিয়েছিল আলাউদ্দিন। ওর জানা ছিল না ওরা ছিল হারলেমে প্রথম বাঙালি পরিবার। ক্রমে নিজেকে জানার চেষ্টা থেকে ‘ডিশওয়াশার ড্রিম’ ও ‘ইন সার্চ অব বেঙ্গলি হারলেম’ এর সৃষ্টি।
‘ডিশওয়াশার’ এর সন্তান আলাউদ্দিন উল্লাহর শিকড় সন্ধান-- মনিজা রহমান
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:০৯ এএম

প্রবাস রিলেটেড নিউজ

আমি শিল্পী সমরজিৎ স্যারের ছাত্র ছিলাম না - কিন্তু.....মনিরুল ইসলাম

ড.সিদ্দিকুর রহমান ও আবদুস সামাদ আজাদের অগঠনন্ত্রাএিক ও স্বৈরাচারি কাজের প্রতিবাদ

যুক্তরাস্ট্রে নির্মিত বহুল আলোচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ ভালবাসার মূল্য কত’ বড় পর্দায় প্রদর্শন

বর্ষণমুখর আবহওয়ায় সম্পন্ন হলো ছড়াটে-র ছড়াড্ডা

প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর অংশগ্রহণ বর্ণাঢ্য আয়োজনে ড্রামা সার্কল’র বাংলা নতুন বছর বরণ

উৎসবমুখর পরিবেশে সিভিল সার্ভিস ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলির মিলনমেলা

জেবিএফএস’র ইফতার মাহফিলে মূলধারার রাজনীতিক সহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের ব্যাপক অংশগ্রহণ সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ব্যতিক্রমী আয়োজন

মা কাঁদে -জাকিয়া রহমান