নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ‘যত বই তত প্রাণ’ শ্লোগানে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বইমেলার সমাপ্তি ঘটলো। চারদিনব্যাপী আয়োজিত এই মেলা শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে চলে সোমবার পর্যন্ত। জ্যামাইকা পারফমিং আর্ট সেন্টারে আয়োজিত মেলার উদ্বোধক এই সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন-এর লেখা বই আর জুলাই বিপ্লব নিয়ে প্রকাশিত বইগুলোর চাহিদা ছিলো বেশী লক্ষনীয়। তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতির তুলনায় বইয়ের কেনাকাটা হচ্ছে কম, আকর্ষণ ছিলো সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। সংশ্লিস্টরা এসব তথ্য জানান। এবারের মেলায় মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছেন ভারতীয় বাঙালী অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ড. আবদুন নূর। অপরদিকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার’ জিতেছে কবি প্রকাশনী। খবর ইউএনএ’র। বই মেলায় লেখক আড্ডা, কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ ছিলো নানা কর্মসূচি। এ আয়োজনে আরো ছিলো বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখক ও পাঠকদের মতবিনিময়। এবারের বইমেলার প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমেরিকান বন্ধু ফিলিস টেইলর এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডি’র চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান, ক্যাপ্টেন (অব:) সিতারা বেগম (বীর প্রতীক), কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ভাষাতাত্তি¡ক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান, অধ্যাপক ড. শামীম রেজা, লেখক ও সাংবাদিক বিরূপাক্ষ পাল, দৈনিক সমকাল-এর উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, লেখক ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি।  উদ্বোধনী অনুষ্ঠান: বর্ণাঢ্য আয়োজন আর উৎসবমুখর পরিবেশে ‘যত বই তত প্রাণ’ শ্লোগানে নিউইয়র্কে শুরু হয় চারদিনব্যাপী ‘নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা-২০২৫’। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারের ৩৪তম বইমেলাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে জামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে। বইমেলার আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে অতিথিদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের তরুণ জনপ্রিয় কবি ও ঔপন্যাসিক সাদাত হোসাইন। মেলা চলে সোমবার পর্যন্ত। উদ্বোধনী পর্বে অতিথি ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বইমেলার আহবায়ক সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার, ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অ্যধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ, এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সিইও বিশ্বজিৎ সাহা। এসময় ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. নজরুল ইসলাম, গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, সৌদ চৌধুরী ও ওবায়দুল্লাহ মামুন সহ দেশ- বিদেশের কবি-লেখক-প্রকাশক সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।মেলায় ২৫টির মতো প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয়। এবারের মেলায় তিন হাজারের বেশি নতুন ও পুরাতন বই প্রদর্শিত হয় বলে আয়োজকরা জানান। বৃষ্টি¯œাত শুক্রবার বিকেলে মনোজ্ঞ সঙ্গীত আর নৃত্য দিয়ে বইমেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের দলীয় নৃত্য উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এরপর মূল মঞ্চের বাইরে বইমেলার উদ্বোধনের পর জামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টার মিলনায়তনে ৩৪টি মোমবাতি জ্বালিয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক কর্মকান্ড শুরু হয়। আমন্ত্রিত অতিথি, কবি-লেখক, প্রকাশক ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মোমবাতি প্রজ্জল করেন। এসময় অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন বইমেলার আহবায়ক রোকেয়া হায়দার। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই পর্বে অতিথিগণ সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। পরে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে সাদাত হোসাইন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, নিউইয়র্ক বইমেলা দেশের বাইরে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে ভ‚মিকা অব্যাহত রাখবে। আমি আশা করবো প্রবাসীরা এই অগ্রযাত্রার সাথে সম্পৃক্ত থেকে আগামী দিনে বইমেলাকে আরো সমৃদ্ধ করবেন। তিনি বাংলা ভাষার প্রতি যারা নিবেদিত প্রাণ রয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বইমেলার উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য, বিগত ৩৪  বছর ধরে আয়োজিত প্রতিটি বইমেলার উদ্বোধক ছিলেন একজন লেখক এবং এবারের মেলার উদ্বোধক সাদাত হোসাইন-কে ঘিরে মেলায় অগতদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিলো লক্ষণীয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণ ছিলেন সাদাত হোসাইন। নিউইয়র্ক বইমেলা-কে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘প্রাণের মেলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিশ্বজিত সাহা মেলা আগম সকল দর্শক-শ্রোতা সহ সকল অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, মেলায় আগামী চার দিন শুধু বইয়ের উৎসব হবে। আয়োজন হবে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের। এরমধ্যে বই নিয়েই বেশী অনুষ্ঠান থাকবে। সাদাত হোসাইন-এর প্রতিক্রিয়া: এদিকে বইমেলা উদ্বোধনের পরপররই লেখক সাদাত হোসাইন তার ফেসবুক পেইজে উদ্বোধনী পর্বেও কয়েকটি ছবির সাথে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় লিখেন- ‘জীবন কখনো কখনো স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর... কিছু মুহূর্ত চিরঞ্জীব... যে ভালোবাসা ও সম্মান নিউইয়র্কবাসী দেখালেন তা আজীবন স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে জ্বলবে। নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার উদ্বোধনের মুহূর্ত... আর তারপর পাঠকের বিস্ময়কর ভালোবাসায় স্নাত এক সন্ধ্যা... এইসব ভালোবাসা অন্তহীন হোক... হোক অফুরান অনুপ্রেরণার উৎস...’ তার কিছুক্ষণ পর আবার লিখেন- ‘এ এক অসাধারণ ভালোবাসার স্বাক্ষর... সাড়ে সাত হাজার মাইল দূরের নিউইয়র্ক বইমেলায়ও পাঠকের ভালোবাসার দীর্ঘ সারি... এইসব ভালোবাসা অন্তহীন হোক’। বইমেলার দ্বিতীয়-তৃতীয় ও শেষ দিন: ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বইমেলার দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনও (২৪-২৫ মে) ছিলো সর্বস্তরের বইপ্রেমীদের সমাগম। মেলায় প্রায় দুই ডজনের মতো স্টল বসলেও বই কেনাবেচা হয়েছে কম। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনায় মেলার উদ্বোধক এই সময়ের জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইন সহ আমন্ত্রিত অতিথি ও প্রবাসের লেখকগণ আলোচনায় অংশ নেন। সাংস্কৃতিক পর্বে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা অংশ নেয়। এদিন মেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে তৈরী ফটো গ্যালারী তথা মুক্তিযুদ্ধের কর্ণার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমেরিকান বন্ধু ফিলিস টেইলর উল্লেখ্য, এবারের মেলার আহŸায়ক সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার।  প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক মনজুর আহমদ বইমেলার দ্বিতীয় দিন সম্পর্কে তার অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেছেন এই বলে- ‘মুক্তধারার স্টলে আমার বই ‘আমার সেই সময়’। বিশ্বজিৎ জানালেন, বইটির বিক্রি অত্যন্ত সন্তেষজনক। এই দুই দিনে প্রতিদিনই ৬/৭ কপি করে বিক্রি হয়েছে। নিউইয়র্কে বইটার এমন চাহিদার কথা শুনে খুব ভাল লাগল।’ মেলার তৃতীয় দিনের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের মধ্যে ছিল আয়োজক কর্তৃক একাধিক পুরস্কার ঘোষণা।

এ বছর নিউইয়র্ক মুক্তধারা- জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। তিনি একজন ভারতীয় বাঙালী। তিনি একাধারে ভাষাতাত্তি¡ক পÐিত, সাহিত্যিক, নাট্য সমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। পুরষ্কার পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি কলকাতা থেকে ভিডিও ম্যাসেজে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। নিউইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কারের অর্থ মূল্য তিন হাজার ডলার। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী ভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জিএফবি-এর কর্নধার গোলাম ফারুক ভূইয়া এ পুরস্কারের অনুদান প্রদান করে থাকেন। গোলাম ফারুক ভূইয়া মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা। এছাড়াও নিউইয়র্ক মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ড. আবদুন নূর। অপরদিকে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের উৎসাহিত করতে নগদ এক হাজার ডলারের ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার’ জিতেছে কবি প্রকাশনী।মেলার তৃতীয় দিনে বইমেলার আহবায়ক ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান রোকেয়া হায়দার, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত সাহা, ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ পুরস্কারগুলো ঘোষণা এবং কৃতি ব্যক্তিদের হাতে পুরষ্কার ও ক্রেস্ট তুলে দেন। মেলার তৃতীয় দিনে একমাত্র শিশু সন্তান সাঈদ ইসমাইলকে সাথে নিয়ে বইমেলায় আসা কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট সৈয়দ আল আমীন রাসেল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তিনি সহ মেলায় আগত অনেক দর্শকের চাহিদা ছিলো জুলাই বিপ্লব সম্পর্কিত বই। তিনি নিজেই এধরনের ৪/৫টি বই ক্রয় করেছেন। তিনি আরো জানান, তার সন্তানকে বইমেলার পাশাপাশি বাঙালী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করার জন্য ছোট সন্তানতে সাথে নিয়ে মেলায় এসেছেন। তার সন্তানও বইমেলা দেখে তার উপযোগী বই ইংরেজীতে অনুবাদ করে প্রকাশের কথা জানিয়েছে।

 বইমেলার তৃতীয় দিন, ছুটির দিন রোববার এবং বইমেলার শেষ দিন সোমবার মেলায় দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্য করার মতো। সোমবার ছিলো নতুন প্রজন্মদের নিয়ে একাধিক বিশেষ অনুষ্ঠান। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান ছাড়াও সাংস্কৃতিক পর্বে ছিলো প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা আর জনপ্রিয় শিল্পী ফাহমিদা নবী সহ দেশ-বিদেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীদের গান। মেলায় উপস্থিত শ্রোতারা প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে শিল্পীদের গান শুনেন। মেলার চতুর্থ দিন সোমবার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বইমেলার সমাপ্তি ঘটে। আয়োজকরা জানান, আগামী বছর বইমেলা আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। বইমেলার শেষ দিনে সাদাত হোসাইনের প্রতিক্রিয়া- এদিকে বইমেলার শেষের দিন মেলার উদ্বোধক লেখক সাদাত হোসাইন তার ফেসবুক পেইজে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাতে তিনি লিখেন- ‘নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা বিস্ময়কর এক ভালোবাসার সর্বপ্লাবী জোয়ার হয়ে যেন ভাসিয়ে দিয়েছে আমায়। এ এক স্বপ্নের মতো ব্যাপার। যে ভালোবাসা আপনারা দেখিয়েছেন, তা অভূতপূর্ব।অভাবিত। শুধু নিউইয়র্কই নয়, সুদূর ভার্জিনিয়া, মিশিগান, নিউজার্সী, জর্জিয়া, পেনসেলভেনিয়া সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও যখন পাঠক কেবল আমার বই, অটোগ্রাফ এবং স্মৃতিচিত্রের বন্দী হতে আসেন, দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেন... তখন নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে হয়। মনে হয় এইসব ভালোবাসার জন্য হলেও একজীবন লিখে যেতে চাই - আজ বইমেলার শেষ দিন, এই শেষ দিনে সন্ধ্যা সাতটায় মূল মিলনায়তনে পাঠকের মুখোমুখি হবো আমি। প্রায় এক ঘণ্টার এই সেশনে পাঠক প্রশ্ন করতে পারবেন আমাকে। আশা করছি দারুণ এক মুহূর্ত হবে সকলের জন্য। আর এতো বিপুল সংখ্যক পাঠক যে বই সংগ্রহ করবেন, তা আমার ভাবনারও অতীত ছিলো। প্রায় সাড়ে সাত হাজার মাইল দূরে বসেও এই পরিমাণ পাঠক যে আমার বইয়ের অপেক্ষায় থাকতেন এমন তীব্র তেষ্টা নিয়ে, তা বোধহয় এখানে না এলে অজানাই থেকে যেতো।

ফলে মেলার তৃতীয় দিনে এসেই অনেক বই-ই শেষ হয়ে গেছে। আর যে বইগুলো এখনো অবশিষ্ট রয়েছে, আজ মেলার শেষ দিনে সেগুলো সংগ্রহের সুযোগ পাবেন মুক্তধারার স্টল থেকে। প্রিয় পাঠক, আপনাদের এই অপার ভালোবাসা আর প্রগাঢ় অনুভূতির যে বিস্ময়কর স্পর্শে আমায় কৃতজ্ঞ ও পরিপূর্ণ করে তুলেছেন, তা আজীবন মনে রাখব। মনে রাখব এমন অকৃত্রিম ভালোবাসার স্পন্দনই আমায় স্বপ্ন  দেখায়, নত হতে শেখায়, আবার ছুঁয়ে দিতে প্রাণিত করে মানুষের হৃদয়ের আকাশ। এইসব ভালোবাসা অন্তহীন হোক... দেখা হোক আজ (২৬ মে, সোমবার) বইমেলায় এবারে শেষবারের মতো... ভালোবাসা প্রিয় নিউইয়র্ক। ভালোবাসা বাংলাদেশ। ভালোবাসা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে এই সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের এক দেশেও এমন নিবেদিত প্রাণ সকল মানুষের জন্য...’ নিউইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণকে প্রদানের মাধ্য দিয়ে ‘নিউইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার’টি প্রবর্তন করে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। এরপর শামসুজ্জামান খান, আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, দিলারা হাশেম, সেলিনা হোসেন ও সমরেশ মজুমদার এ পুরস্কারে ভূষিত হন।

২০২২ সালে ড. গোলাম মুরশিদ এবং ২০২৩ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন কবি আসাদ চৌধুরী। গতবছর (২০২৪) এ পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এবার পেলেন ভারতীয় বাঙালী, ভাষাতাত্তি¡ক পÐিত, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক বইমেলার একটি আসরে উপস্থিত থেকে পবিত্র সরকার নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা উদ্বোধন করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজর্সীভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জিএফবি’র কর্ণধার গোলাম ফারুক ভূইয়া পুরস্কারের অনুদান প্রদান করে থাকেন। তিনি মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা। এই পুরস্কারের অর্থ মূল্য তিন হাজার ডলার।