মোহাম্মদ আবদুল্লাহ
চির নিদ্রায় শায়িত এক সময়কার দক্ষ ও কর্মঠ ব্যাংকার মোঃ মকবুল হোসেন বিশ্বাস (অবসরপ্রাপ্ত এ,জি,এম, সোনালী ব্যাংক লিঃ)
জনাব মোঃ মকবুল হোসেন বিশ্বাস, ১৫ নং সেক্টর, উত্তরা,দিয়াবাড়ী, ঢাকা(স্হায়ী নিবাস,মোহাম্মদ পুর,মাগুরা, প্রাক্তন ম্যানেজার, হাটবোয়াালিয়া শাখা,দামুড়হুদা শাখা,চুয়াডাঙ্গা শাখা,জেলা চুয়াডাঙ্গা, গাংনী শাখা, মেহেরপুর শাখা জেলা মেহেরপুর; কুষ্টিয়া শাখা, জেলা কুষ্টিয়া ; এ,জি,এম- প্রিন্সিপাল অফিস, গাজী পুর,এজিএম প্রধান কাযালয়ের কয়েক বিভাগের) গত ২৯ জুন রাত (আনুমানিক ১১.৩০ মি) National Heart Foundation, ঢাকতে ইন্তেকাল করেন। ইন্ন লিল্লাহি ওয়া ----- রাজিউন। পারিবারিক সুএে জানা যায়,গতকাল রাত ১০ দিকে রাতের আহার শেষে ঘুমিয়ে যান। রাত সাড়ে ১০ দিকে ঘুমের মধ্যে গলার ভিতর একটু আওয়াজ শোনা যায়। এরপর উনার আর কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না বিধায় তাঁকে দ্রুত ঢাকার National heart Foundation hospital এ নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আজ ৩০ জুন বাদ জুম্মা দিয়াবাড়ী বাইতুর নুর জামে মসজিদে জানাজা শেষে দিয়াবাড়ী খালপাড় কবরস্থানে দাফন করা হয়। আমি উনার জানাজায় ও দাফনে উপস্থিত ছিলাম। মকবুল স্যারের বাড়িতে উপস্থিত হলে সোনালী ব্যাংক এর সাবেক জি. এম. জনাব মো মাহি আলম স্যার,অবসরপ্রাপ্ত ডি জি এম জনাব মো শামসুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত এ জিএম জনাব মোঃ শওকত,এ জি এম, জনাব কালি পদ আরও অনেকের সাথে দেখা হয়। আমি উনার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাভিভূত। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচিছ। মহান আল্লাহ তাঁদের এই শোক কাটিয়ে উঠার শক্তি, সাহস ও ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুক এ দোয়া করি। আল্লাহ সুবহানুতাআলা মকবুল হোসেন বিশ্বাসকে জান্নাতুল ফেরদৌসে উচচ মাকাম দান করুন এ দোয়া করি। জনাব মকবুল হোসেন বিশ্বাস মৃত্যু কালে স্ত্রী, ২ ছেলে, ১মেয়ে ও নাতি নাতনি,আত্মিয়- স্বজন, গুনগূাহী রেখে গেছেন।
সোনালী ব্যাংকে চাকুরী জীবনের প্রায় প্রথম থেকেই উনি ছিলেন আমার এক নিরবচ্ছিন্ন অনুপ্রেরণা। তাই মকবুল সাহেব সম্বন্ধে কিছু কথা না বললে তাঁর প্রতি অবজ্ঞা করা হবে।
সময়টি ছিল খুব সম্ভব ১৯৮৭ সনের প্রথম দিকে। আমি তখন গাংনী শাখা, মেহেরপুর এর probationary officer। মকবুল সাহেব চুয়াডাঙ্গা আঞ্চল থেকে বদলী হয়ে গাংনী শাখায়(জেলা মেহেরপুর) Manager হিসাবে যোগদান করলেন। ঐ সময় গাংনী শাখায় pledge কৃত পাটের বিপরীতে advance/অগূূীম এর খুব খারাপ অবস্থা।পরপর কয়েক বছর বাজারে পাটের দাম কম হওয়ায়/ থাকায় ব্যাংকের গ্রাহকেরা পাট বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করায় গূাহকদের ঋণের বোঝা বেড়ে যেতে থাকে। অপর দিকে পরপর কয়েক বছর বাজারে পাটের দাম পড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের pledge godown এ পাট পঁচে বিক্রির অযোগ্য হতে থাকে। ঠিক ঐ সময় ব্যাংক কতৃপক্ষ জনাব মকবুলকে যোগ্য ভেবে ঐ শাখায় তাকে manager হিসাবে posting দেন। শুরু হলো মকবুল সাহেবের challenge। . শাখার দায়িত্বভার গ্রহণ করেই উনি pledge কৃত মাল বিক্রি জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আঞ্চলে কূেতা খুজতে লাগলেন। অন্য দিকে সময় শেষে ব্যাংক বন্ধ করে উনি আমাকে নিয়ে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গিয়ে গ্রাহকদের সাথে চা বিস্কুট খেয়ে ও কথাবার্তার মাধ্যমে সৌখ্যতা গোড়ে তুলতে থাকেন। এ ভাবেই প্রতিদিন রাত দশ থেকে সাড়ে দশ পযন্ত চলতো। রাতে ফেরার সময় আমি বলতাম স্যার, এত রাত পযন্ত বিভিন্ন গ্রাহকের দোকানে বা প্রতিষঠানে এতো কথা বললেন কিন্তু একটিবারও তো পাট বিক্রি করে ঋন পরিশোধ এর কথা বললেন না। আমাকে মকবুল সাহেব বললেন" দুর পাগল এখন এদের সাথে বন্ধুত করার সময়,এখন এ বাাপরে কিছু বলা ঠিক হবে না"। এ দিকে মেসের মহিলা রাধুনি আমার প্রতিদিন ফিরতে অনেক রাত হওয়ায় এক দিন সেরেফ জানিয়ে দিল -" প্রতিদিন আপনার ভাত নিয়ে এতো রাত পযন্ত আমি বসে থাকতে পারবোনা"। বিষয়টি মকবুল স্যারকে জানানোর সাথে সাথে উনি আমাকে বললেন কাল থেকে রুম এর চাবি রেখে আসবেন। মেসের মহিলা / রাধুনি খাবার রুমে রেখে তালা দিয়ে চলে যাবে। আমি তাই করলাম। কিছু দিন এভাবে গ্রাহক পযায়ে drive চলার পর দেখা গেল কূেতা খুজে পেয়ে রাতের আঁধারে পচা/ নিম্ন মানের পাট বিক্রি করে মকবুল স্যার ঐ শাখার অধিকাংশ খারাপ লোন adjust করতে সক্কম হলো ও শাখাটি. Bed loan থেকে রক্ষা পেল। এখানে মকবুল সাহেব তাঁর দায়িত্ব কত'বাে কত devoted ছিলেন নিঃসন্দেহে তার প্রমাণ মেলে। এর কিছু দিনপর উনি আমাকে বললেন " আপনাকে শাখার টেবিল stationary পরিপালনের দায়িত্ব নিতে হবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। মাসে শেষে stationary খাতে বাজেট বরাদ্দ থেকে বেচে যাওয়া টাকা মকবুল স্যারের কাছে জমা দিতে গেলে উনি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে বলেন "এ পযন্ত এ খাতে টাকা ফেরত দিতে কাওকে দেখি নাই " আপনি ফেরত দিচ্ছেন। তখন আমি ভাবতাম স্যার আমাকে পরীক্ষা করছেন। এর কিছু দিনপর আমাকে বললেন আপনাকে শাখার একটা গুরুত্বপূর্ণ desk " Loans and advance" পরিপালনের দায়িত্ব দেবো। সপ্তাহের শেষে ছুটির দিনে বাড়ি যেতে পারবেন না শাখায় কাজ করতে হবে। তখন স্যারকে বলেছিলাম " স্যার সপ্তাহিক ছুটিতে আমার মা-বাবা কে না দেখে আমি থাকতে পারবোনা। আমাকে যেতে ই হবে। স্যারের এ প্রস্তাব এর কথা অন্য শাখার Manager দের কে বললে এবং ঐ কাজ করতে গিয়ে আমার চাকুরী চলে যাবে কিনা জানতে চাইলে উনারা জানালেন কোন Manager ই এখন এভাবে loans & Advance শিখাতে চাই না। আপনি ভাগাবান, এরকম Manager পেয়েছেন। আর বাড়িতে না যাওয়ার জন্য ও এমনিতেই বলবে। আপনি এখন probationary officer, আপনি এখন শিখবেন চাকরি যাবে কেন। আপনি বাড়িতেও যেতে পারবেন,loans and advance শিখবেন,চাকুরীও যাবে না। ঐ রকম একটু বলবে। আপনি রাজি হয়ে যায়। এভাবেই স্যার এর কাছ থেকে আমার loan and advance শিখা। তারপর বেশ কয়েক মাস পর মকবুল স্যারের মেহেরপুর শাখায় বদলীর order হয়। এরপর গাংনী শাখা থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবার সময় স্যার আমাকে ডেকে বললো " আপনাকে মেহেরপুর শাখায় বদলী করে নিয়ে যাবো। আপনি রাজি আছেন তো?" এরপর আমার মেহেরপুর শাখায় বদলীর order হয় এবং মেহেরপুর শাখায় যোগদান করি। এরপর হঠাং মকবুল স্যারের পিতার মৃত্যুর সংবাদ আসে। ঐ সময় আমার থেকে Senior অনেক কম'কতা থাকা শতে'ও স্যার আমাকে মেহেরপুর শাখার অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলমারির চাবি দিয়েছেন উনার পিতা বিয়োগ ছুটি কালীন সময়ে এবং আমাকে বলেছেন ঐ চাবি আমি যেন অন্য কেউ কে না দিই। তখনি ভাবতাম স্যার আমাকে কতটা বিশ্বাস করেন।
মকবুল স্যার সমপকে' আমার আরও অনেক বলার ছিলো। চাকুরী জীবনে আমি উনার থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, শিখেছি, নিয়েছি। উনি আমাকে উনার আত্নীয় মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্হাপন করে উনি আমাকে উনার জামাতা ও উনি আমার ফুফা শ্বশুর হয়েছেন। তাই মকবুল স্যার এখন আমার কাছে মকবুল স্যার থেকে মকবুল ফুফা জান হয়ে গেছে।যা কখনো ছিন্ন করা, অস্বীকার করা বা ভুলবার নয়।আত্নীয় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বা জড়িয়ে বাক্তি মকবুল, প্রাতিষ্ঠানিক মকবুল বা সমাজিক মকবুল আমার কাছে অতীতে যেমন সম্মানের ছিল, এখন তেমনি , ভবিষ্যতেও তেমনি থাকবে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত। ঘুনে ধরা এ সমাজের ছোটো খাটো ভুল বোঝা বুঝি বিষয় নিয়ে অতীতেও আমি ভাবিনি, এখনোও ভাবিনে এবং ভবিষ্যতেও ভাবোনা। কারন এ পৃথিবীতে আমরা ক্ষনিকের মুছাফির। ডাক পড়লেই চলে যেতে হবে শুন্য হাতে।
হে আল্লাহ তোমার কাছে আমার সচছ মনের আকুতি ও নিবেদন মকবুল ফুফাজানকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। আমিন।