অস্তাচলের আর্তনাদ 

 কাজী শামসুল হক 

 

লোহার সিংহাসন,

শিকল জড়ানো ক্ষমতার চূড়া,

যেখানে বসে থাকে আধিপত্যের মিথ্যে ঈশ্বর।

অন্ধকারের মেঘে ঢাকা চাঁদ

তাদের চোখের মতোই নিঃসঙ্গ,

দিগন্তের শেষ প্রান্তে কেবল শুনি—অস্তাচলের আর্তনাদ।

জ্বলন্ত মশালের নিচে

তারা রাখে বন্যার বাঁধ,

কিন্তু নদী চেনে নিজের পথ।

পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে তারা চায়

সময়কে বন্দি করতে,

তবু সময় শঙ্খধ্বনি তোলে—

মৃত্যুর মঞ্চে।

কঠিন হাতের গাছ,

তাদের শেকড় সেচে রক্তের রং,

তবু শেকড় পচে যায়

যখন বাতাসে বয়ে আসে

প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর।

প্রাসাদের দেয়াল ফাটে,

মাটির তলায় জমে থাকা ঘৃণা

উদগীরণ করে আগ্নেয়গিরির মতো।

তাদের মুকুট জ্বলে যায়,

স্বর্ণ হয়ে ওঠে ছাই।

আর তখন—

লোককথার হাওয়ায় উড়ে বেড়ায়

স্বৈরশাসকের নামহীন গল্প।

পাহাড় জানে, নদী জানে,

কেবল মানুষ মনে রাখে—

কীভাবে ভেঙেছিল শিকল,

কীভাবে সূর্য উঠেছিল নতুন সকালে।