NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, মে ২৮, ২০২৫ | ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
বাংলাদেশি প্রবাসীদের আনন্দঘন পরিবেশে কুইন্সে পালিত হলো ইউ এস এ ৯৭-৯৯ এর পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশে সামরিক স্থাপনা প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে চীন, জানাল যুক্তরাষ্ট্র 'To achieve great things, we must dream big and take action to pursue them' চারদিনব্যাপী নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা ৩৪তম বইমেলা শুরু ৩৪তম নিউ ইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা শুরু ২৩শে মে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন ফিলিস টেইলর, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, ক্যাপ্টেন (অব.) সিতারা বেগম, বীর প্রতীক  এবং সাদাত হোসাইন ৮ মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে: মির্জা আব্বাস Bangladesh pledges specialized units, new partnerships, and several pilot  projects at the 2025 Berlin UN Peacekeeping Ministerial আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করায় ভারত উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র-সরঞ্জাম কিনবে সৌদি
Logo
logo
ভয়েস অব আমেরিকার ( বাংলা বিভাগের নয় ) প্রতিবেদন

বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন একদলীয় শাসনের ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে


খবর   প্রকাশিত:  ২৪ মে, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম

বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন একদলীয় শাসনের ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে

বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন একদলীয় শাসনের ভীতি বাড়িয়ে তুলেছে। সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ভয়েস অব আমেরিকা এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে। এর শিরোনাম ‘ওয়ান-সাইডেড বাংলাদেশ ইলেকশন রেইজেজ অব ওয়ান পার্টি রুল’। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক একদল পর্যবেক্ষক এই নির্বাচনকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ’ বলে নিশ্চয়তা দেয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু দেশের কর্মকর্তারা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রিপোর্টে আরও বলা হয়, গত রোববার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে বিজয়ী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই প্রতিবাদ বিক্ষোভে বাধা দেয়া হয়েছে। কখনো কখনো তা সহিংস হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এক দমনপীড়নে হাজার হাজার সদস্যকে জেলে পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একদল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।

তার মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান জিম বেটস। তিনি ঢাকায় ভোট চলাকালীন বেশ কয়েকটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। ভোটগ্রহণ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভোটের প্রশংসা করে মূল্যায়ন করেছেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে জিম বেটস বলেছেন, আমি বলবো এটা এরই মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু ভয়েস অব আমেরিকাকে এক ইমেইল বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক টিম পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সেখানে যাদের কথা বলা হচ্ছে সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। তার বা তাদের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নয়।  পক্ষান্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, এই নির্বাচন যে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি এ বিষয়ে অন্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্র। সব দলের অংশগ্রহণে এই নির্বাচন না হওয়ায় আমরা এর নিন্দা জানাই। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সময়ে এবং আগের মাসগুলোতে যেসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে তার নিন্দা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। বৃটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অত্যাবশ্যকীয় হলো মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। নির্বাচনের পিরিয়ডে অব্যাহতভাবে এই মানদণ্ড মানা হয়নি।    জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভোলকার তুর্ক বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক মাসে বিরোধী দলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে খেয়ালখুশি মতো আটক করা হয়েছে, না হয় ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। একটি সত্যিকার খাঁটি প্রক্রিয়ার জন্য এই কৌশল সহায়ক নয়। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানান সত্যিকার সবার অংশগ্রহণমূলক একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির।  যখন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো ব্যাপকভাবে নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করছিল, তখন চীন, রাশিয়া ও ভারত সহ কিছু দেশ দ্রুততার সঙ্গে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। তার বিজয়ের প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহতভাবে ঘনিষ্ঠ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবার  বিজয়ী হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। বাংলাদেশের সঙ্গে জনগণকে কেন্দ্রে রেখে অংশীদারিত্ব এবং সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।   ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে বিরোধী জোট। কিন্তু সেই দাবি শেখ হাসিনা প্রত্যাখ্যান করার পর সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি।

জনগণকে আহ্বান জানানো হয় সরকারকে কোনো সহযোগিতা না করতে এবং নির্বাচনে ভোট না দিতে। নির্বাচন কমিশন সরকারিভাবে যে হিসাব দিয়েছে তাতে ভোটার উপস্থিতি ছিল শতকরা ৪১.৮ ভাগ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়া, পর্যবেক্ষক, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো এমনকি যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তাদের এক অংশ এই সংখ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এই সন্দেহের অন্যতম কারণ হলো ভোটার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে লাফিয়ে বাড়া। নির্বাচন কমিশনের সচিব ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে হিসাবে বলেছিলেন শতকরা ২৭.১৫ ভাগ ভোট পড়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত হিসাবে বলেছে ভোট পড়েছে শতকরা ৪১.৮ ভাগ।  বিরোধীরা বলছেন, ভোটের শেষ এক ঘণ্টায় কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ ভোট পড়েছে  বলে নির্বাচন কমিশনের দাবি মারাত্মক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন শতকরা কমপক্ষে ৮০ ভাগ ভোটার।  

 প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারিভাবে ২৯৮ টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও কথিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যারা আওয়ামী লীগের নেতা- তারা ২৮০টি আসন নিশ্চিত করেছেন। ফল হিসেবে জাতীয় সংসদের শতকরা ৯৪ ভাগ আসনই ক্ষমতাসীন দলের এমপিতে পূর্ণ। ২৭টি দল নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। তার মধ্যে ২৩টি দল একটিও আসন পায়নি।   জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের একটি স্থানীয় টিভি স্টেশনকে বলেছেন, নির্বাচন হয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তার দল ১১টি আসনে জয় পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার যাকে চায়, তিনিই জিতেছেন। আমি মনে করি এই নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে না।   ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিস্টিঙ্গুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ সম্প্রতি গ্লোবেল নিউজকে বলেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে এমন একটি বিরোধী দল বানাতে চাইছে পার্লামেন্টে যারা ক্ষমতাসীন দলকেই সমর্থন করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একদলীয় শাসনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সম্প্রতি দুটি সময়ে বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কর্মীদের মধ্যে জল্পনা দেখা দিয়েছে যে, নতুন সরকার বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে।